You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক শফিক উদ্দিন আহমেদ

শফিক উদ্দিন আহমেদ, বীর প্রতীক (১৯৪৯-২০০৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৯ সালের ২০শে এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বর্ণি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তজমুল আলী এবং মাতার নাম সামসুন নাহার। শফিক উদ্দিন আহমেদ বর্ণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি লাউতা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং সুজাইল (বড়লেখা) মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন।
শফিক উদ্দিন আহমেদ ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ইপিআর-এ যোগ দেন। কুমিল্লায় প্রশিক্ষণ শেষে কোম্পানি ক্লার্ক হিসেবে তিনি সেখানে ১ নম্বর উইং-এ নিযুক্ত হন। তাঁর কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন অবাঙালি ফাতাহ খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তাঁকে সিলেট সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে বদলি করা হয়।
১৯৭১ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শফিক উদ্দিন আহমেদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি আরো পাঁচজন সৈনিক নিয়ে সিলেট শহরের বিভিন্ন জায়গায় খণ্ডযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ইপিআর-এর সৈন্যরা সংগঠিত হলে তিনি অন্যদের সঙ্গে ভারতে যান। পরিকল্পিত উপায়ে যুদ্ধ শুরুর পর শফিক উদ্দিন আহমেদ ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। এ সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মেজর সি আর দত্ত, বীর উত্তম-। শফিক উদ্দিন বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। সুতারকান্দি (বিয়ানিবাজার) অপারেশনে তিনি দুজন পাকসেনাকে আহত অবস্থায় ধরে নিয়ে আসেন। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার নায়েক মঞ্জুর আলী তালুকদার আহত হলে তিনি তাঁকে ভারতে নিয়ে যান। লাঠিটিলা (জুড়ি, মৌলভিবাজার) চা বাগানে সংঘটিত সম্মুখ যুদ্ধের সময় তিনি একজন পাকসেনাকে অস্ত্রসহ ধরে ফেলেন। আটককৃত পাকসেনাকে ভারতে নেয়া হলে ভারতের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা শফিক উদ্দিনের সাহসিকতার ভূয়সী প্রসংশা করেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার শফিক উদ্দিন আহমেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (তাঁর গেজেট নম্বর ৪৬৭, খেতাবের সনদ নম্বর ২১৭)।
মুক্তিযুদ্ধের পর শফিক উদ্দিন বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি হাবিলদার হিসেবে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বড়লেখার বর্ণি গ্রামে বসবাস করতে থাকেন। অবসর জীবনে তিনি ক্রীড়া, শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত হন। তিনি এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখেন। তিনি বর্ণি আদর্শ হাইস্কুলের সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় দাশের বাজার থেকে গুদাম বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ছালেহা বেগম। শফিক উদ্দিন আহমেদ ২০০৪ সালে ৭ই জুন বর্ণি গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!