শংকরদহ গণহত্যা (গংগাচড়া, রংপুর)
শংকরদহ গণহত্যা (গংগাচড়া, রংপুর) সংঘটিত হয় ১৩ই ডিসেম্বর। এতে ২৪ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। শংকরদহ গংগাচড়া উপজেলার মহীপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গংগাচড়া উপজেলা সদর থেকে ৭ কিমি উত্তর-পূর্ব দিকে মহীপুরের সন্নিকটস্থ তিস্তা ব্রিজের উত্তরে এ গ্রামের অবস্থান। শংকরদহ গ্রামের যে স্থানটিতে গণহত্যা হয়েছিল সে স্থানটি বর্তমানে তিস্তানদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তৃক ১২ই ডিসেম্বর গংগাচড়া থানা আক্রমণের খবর পেয়ে ১৩ই ডিসেম্বর দুপুর বেলা রংপুর সেনানিবাস থেকে একদল পাকিস্তানি সেনাসদস্য গংগাচড়া অপারেশনে এসে শংকরদহ গ্রামে ঢুকে পড়ে। গ্রামে ঢুকেই পাকসেনারা গ্রামের পথে, আশেপাশে যেখানেই যাকে পেয়েছে তাকেই গুলি করে হত্যা করেছে। তারা গ্রামে ঢুকে প্রথমেই ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে মফিজউদ্দিন (পিতা ঘেগ্যা, গংগাচড়া), ফজরউদ্দিন (পিতা খয়ের উল্লাহ চৌধুরী, গংগাচড়া), আব্দুল আজিজ (গংগাচড়া) ও হাবিবুর রহমান (পিতা বছির উদ্দিন, গংগাচড়া) এ চার জনকে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হানাদার বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের কিছু লোক স্থানীয় বকুলতলা মসজিদে জড়ো হয়। হঠাৎ হানাদাররা মসজিদের ভেতর ঢুকে নামাজরত মানুষের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে মসজিদের ইমাম মৌলভী মো. তৈয়ব আলী (পিতা আব্দুল কাদের মুন্সী, শংকরদহ), মহিরউদ্দিন (পিতা বসদ মিস্ত্রী, শংকরদহ), সহিরউদ্দিন (পিতা কছিম উল্লাহ, শংকরদহ), বছিরউদ্দিন (পিতা নতিবুল্লাহ মাঝি, শংকরদহ), নবিরউদ্দিন (পিতা কছিম উল্লাহ, শংকরদহ), নবিরউদ্দিনের ভাই সদ্দি মামুদ ও নবিরউদ্দিনের ৭ বছরের ছেলে দুলাসহ ৭ জন নিহত হয়।
পাকসেনারা জানতে পারে যে, গ্রামের রজনী কান্তের বাড়িতে বিভিন্ন বয়সের মহিলারা আছে। একথা শুনে হানাদার বাহিনী রজনী কান্তের বাড়িতে প্রবেশ করে। অতঃপর নারীদের অপহরণ করে তারা তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে। রজনী কান্ত বাধা দিতে গেলে পাকসেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। রজনী কান্তের ভাই খোকা কান্ত কুড়াল হাতে হায়েনাদের প্রতিরোধ করতে গেলে তাকেও বর্বররা গুলি করে হত্যা করে। শংকরদহ গ্রামে হত্যাযজ্ঞ ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে গ্রাম থেকে ফেরার পথে হায়েনারা আরো ১৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। নিহতরা হলেন- মুন্সী মঞ্জুর আলী (শংকরদহ), রহিমউদ্দিন (শংকরদহ), আকবর আলী (পিতা শয়লা করিম, শংকরদহ), সহিদার রহমান (পিতা আব্দুল গণি, মহীপুর), বদিউল ইসলাম (পিতা বাংটু মামুদ, শংকরদহ), আলীমুদ্দিন (পিতা হাফিজ উদ্দিন, মহীপুর), জমিরউদ্দিন (পিতা গমির উদ্দিন, শংকরদহ) ও তার শিশু কন্যা, সামাদ আলী মাস্টার (শংকরদহ), নছর উদ্দিন (পিতা সমর উদ্দিন মাউথ, শংকরদহ), মমতাজ উদ্দিন (পিতা হোসাইন, শংকরদহ), রজনীকান্ত বর্মণ (শংকরদহ) ও খোকা কান্ত বর্মণ (শংকরদহ)। পাকহানাদার বাহিনী শংকরদহ গ্রামে মোট ২৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। [বিবেকানন্দ মহন্ত]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড