You dont have javascript enabled! Please enable it!

শঙ্খনদীর চর বধ্যভূমি (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)

শঙ্খনদীর চর বধ্যভূমি (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নে অবস্থিত। ২২শে এপ্রিল দোহাজারী এলাকা দখলের পর শঙ্খনদীর ওপর নির্মিত দোহাজারী ব্রিজের দক্ষিণাংশের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের এই চরে পাকবাহিনী ও তাদের দালালরা বাঙালি নিধন শুরু করে। দোহাজারী সিএন্ডবি অফিস ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাকবাহিনীর প্রধান ক্যাম্প। দক্ষিণ চট্টগ্রামের নানা অঞ্চল থেকে লোকজনদের ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভয়াবহ নির্যাতনের পর অধিকাংশকে এখানে হত্যা করা হতো। বাকিদের হত্যা করা হতো শঙ্খনদীর এই চরে। বিশেষত, চন্দনাইশ, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী ও বাঁশখালী থেকে লোকজনদের ধরে এনে এখানে হত্যা করা হতো। অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে চন্দনাইশ-পটিয়ার দিক থেকে ৮ জন লোককে এখানে ধরে এনে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং অপরজনকে নির্মম নির্যাতনের পর মুক্তি দেয়া হয়। তার নাম আবুল কালাম চৌধুরী (পিতা আবদুল মোনাফ, দক্ষিণ গাছবাড়িয়া হরিণার বাড়ি)। এই চরের ক্ষেতের মধ্যেও লোকজনদের হত্যা করা হতো।
এই চরে যাদের হত্যা করা হতো, তাদের লাশ শঙ্খ নদীতে ফেলে দেয়া হতো। কোনো-কোনো লাশ শৃগাল-কুকুরকে খাওয়ানোর জন্য চরে রেখে দেয়া হতো। চরের মধ্যে কৃষি সেচ প্রকল্পের পাম্প মেশিনরে একটি পরিত্যক্ত ঘর ছিল, যার মালিক ছিল কেউচিয়া শান্তি কমিটি-র যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু ছৈয়দ (পিতা আবদুল কাদের)। পাম্প মেশিনটি চালু থাকা অবস্থায় এখানে একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। শৃগাল-কুকুরের ভক্ষণের জন্য এই গর্তে এবং নিকটস্থ চরাংশে লাশ রাখা হতো। ৫ই ডিসেম্বর সাতকানিয়ার কালিয়াইশ এলাকার সেনাসদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল (পিতা হাকিম আলী)-কে এই চরে হত্যা করে তাঁর লাশ এই গর্তে রেখে দেয়া হয়।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে উত্তর পাড়ে অবস্থিত পাকবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে দক্ষিণ চরের বেগুনখেতে সাতকানিয়ার কাঠগড় এলাকার হাজি মোহাম্মদ আলী (পিতা আনছুর আলী মাতবর) পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। ২২শে এপ্রিলের পর থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে পাঁচ শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়। এ কাজে পাকবাহিনীকে স্থানীয় যেসব দালাল সহায়তা করে, তারা হলো: হাজি আবদুল মোনাফ কোম্পানি (পিতা হাজি বদিউর রহমান, কালিয়াইশ কাঠগড়), আবু ছৈয়দ (পিতা আবদুল কাদের, কাঠগড়), হাবু মিয়া (পিতা বাচ্চু মিয়া, গুরুগুরি, কাঞ্চনা, সাতকানিয়া), হোসাইন আহমেদ (পিতা পুতুন আলী দফাদার, চৌধুরীপাড়া, কাঞ্চনা), জব্বার আলী (চৌমুহনি, সাতকানিয়া), আজিম উদ্দিন (পিতা আনজু মিয়া), গোলাম হোসেন (পিতা ওমদা মিয়া মেম্বার), বেল্টা মিয়া (গুরুগুরি), আমিন শরীফ (পিতা আবদুল হাকিম, পূর্ব দোহাজারী), হাজি নুরুল ইসলাম (পিতা আবদুস সামাদ, হাজিপাড়া, চন্দনাইশ সদর), আহমদ শফি ওরফে চেইঙ্গা ফইর (পিতা নিয়াজুর রহমা, দোহাজারী), এয়াকুব মেম্বার (পিতা আবদুল জব্বার, পূর্ব দোহাজারী), মাহফুজুর রহমান (পিতা ছগির আলী, ফুলতলা, দোহাজারী), আবু যাহের (পিতা মৌলবি সুলতান আহমেদ, দোহাজারী) প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!