বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
শক্তি চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৩-১৯৯৫) ভারতের কবি। তিনি ১৯৩৩ সালের ২৫শে নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বাহারু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কলকাতায় এসে তিনি ১৯৪৮ সালে মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৪৯ সালে প্রগতি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে তিনি হাতেলেখা একটি পত্রিকা প্রগতি-র প্রকাশ শুরু করেন, পরবর্তীকালে যা বহ্নিশিখা নামে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হতে থাকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। তিনি ১৯৫১ সালে মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫৩ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন, তবে পরীক্ষা দিতে পারেননি। তিনি কৃত্তিবাস, আনন্দবাজার পত্রিকা ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকায়ও নিয়মিত লিখতেন। তিনি ‘হাংরি আন্দোলন’ নামক সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মতানৈক্যের কারণে পরবর্তীকালে তিনি এ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর অসংখ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— কিছু মায়া রয়ে গেলো, যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো, বিষের মধ্যে সমস্ত শোক, টরে টক্কা, সকলে প্রত্যেকে একা ইত্যাদি। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৩)-সহ অন্যান্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালের ২৩শে মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। কবিতা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে রচিত তাঁর অনেক নিবন্ধ ও ফিচার আনন্দবাজার পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতো। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। অতি অল্প সময়ে কঠিন পরিশ্রম করে ১৯৭১ সালের মে মাসের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ২৫০ পৃষ্ঠার সাংবাদিকের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন, যা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত। তাঁর প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ শক্তি চট্টোপাধ্যায়-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড