You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক লুৎফর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক লুৎফর রহমান

লুৎফর রহমান, বীর প্রতীক (১৯৪৩-২০১১) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৩ সালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সী সাইদুর রহমান এবং মাতার নাম মোসা. জোবেদা খানম। তিনি বাগেরহাটের মোল্লার হাট হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ চাকরির মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া বিওপি-তে হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ২৯শে মে সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা বর্ডারে পাকবাহিনী তাঁদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর আক্রমণ করলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁর পেটের ডান দিকে এবং ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। ভারতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ৩রা ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন মাহমুদ উদ্দীনের নির্দেশে ৪০ জন সহযোদ্ধা নিয়ে নাবিদকাঠি গ্রামে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। তাঁদের তীব্র আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ-যুদ্ধে সিপাহি ফারুক লস্কর, সিপাহি আব্দুল মালেক ও হাবিলদার তরিকুল ঈসলাম শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৫৪, খেতাবের সনদ নং ২০৪)।
মুক্তিযুদ্ধের পর লুৎফর রহমান বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগ দেন। কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে মেডিকেল পরীক্ষায় অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ১৯৮৫ সালে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। তিনি খুলনা আওয়ামী লীগ-এর রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি ‘পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’এর ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতিরও নেতা ছিলেন। খুলনায় তাঁর নামে একটি রাস্তা রয়েছে। ২০১১ সালের ১৩ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসা. মুনজিলা লুৎফর। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড