লেটাবর যুদ্ধ (শিবপুর, নরসিংদী)
লেটাবর যুদ্ধ (শিবপুর, নরসিংদী) ৬ই অক্টোবর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে এ-যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
উপজেলার যোশর ইউনিয়নের লেটাবর গ্রামে শশী পাল এবং অবনী মোহন পালের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ ক্যাম্পে কামারটেকের সুলতান উদ্দীন মিয়া, যোশরের মফিজউদ্দীন, জয়নগর ইউনিয়নের নৌকাঘাটার ধনাইয়ারের হাফিজউদ্দীন হাবি, ছুটাবন্দের আব্দুল মোতালিব খানসহ প্রায় ৪০০ জন মুক্তিযোদ্ধা পালাক্রমে অবস্থান করতেন। অবনী মোহন পালের বাড়িতে ৬ই অক্টোবর দুপুরের দিকে সুলতান উদ্দীন মিয়া এবং হাফিজউদ্দীন হাবি ছাড়া অন্য মুক্তিযোদ্ধারা অন্যত্র অপারেশনে যান। এদিন রাত ১০টার দিকে সেন্ট্রি হিসেবে সুলতান উদ্দীন মিয়া এবং হাফিজউদ্দীন হাবি আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে পাহারারত ছিলেন। এ-সময় ৫০ থেকে ৬০ জন পাকিস্তানি সৈন্য রায়পুরা কলোনি ক্যাম্প থেকে পায়ে হেঁটে চরফুলদি আসে। সেখান থেকে তারা নৌকাযোগে আড়িয়াল খাঁ নদী পাড় হয়ে লেটাবর বাজারের ঘাটে আসে। রাস্তায় উঠতে-উঠতে পাকিস্তানি সেনারা গেরিলা কায়দায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দীন মিয়া পাকিস্তানি সেনাদের আগমন টের পেয়ে তাদের উদ্দেশে ‘হোল্ড, হ্যান্ডস আপ’ বলেন। এটা বলার সঙ্গে-সঙ্গেই পাকিস্তানি সৈন্যরা গেরিলা কায়দায় সুলতান উদ্দীন মিয়াকে ধরে ফেলে। তারা তাঁকে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে এবং বুট জুতার আঘাতে তাঁর শরীরের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
পাকিস্তানি সেনাদের আগমন টের পেয়ে লেটাবর বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে চলে যায়। এরপর পাকিস্তানি সৈন্যরা লেটাবর বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা সনাতন বিশ্বাস নামে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে আটক করে। তিনি নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে বেঁচে যান। লেটাবর থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পায়ে হেঁটে যোশর ও কাটাঘাট বাজারে এসে পুরো বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয়। সারা রাত ধরে জ্বালাও-পোড়াও চলতে থাকে। সকাল বেলা যোশর ও কাটাঘাট বাজার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে যোশর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফপুরের মেজবাহউদ্দিন ভূঁইয়ার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা কিরণ শংকর বণিকের ওষুধের দোকান পুড়িয়ে দেয়। দোকানের আলমারিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ-এর দাপ্তরিক কাগজপত্র ছিল। সেগুলোও পুড়ে যায়। তারা যোশর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত শরণার্থী তথা কাপাসিয়া, মঠপাড়ার বর্মী ও কিশোরগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী দুই হিন্দু ব্যক্তিকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করে।
তাণ্ডবলীলা শেষে ৭ই অক্টোবর সকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা লেটাবর এলাকা ত্যাগ করলে শশী পালসহ কয়েকজন গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দীন মিয়ার মরদেহ চান্দেরটেক নামক স্থানে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন প্রধান ও বেদন মিয়াসহ কয়েকজন তাঁর মরদেহ কামারটেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড