লেলাং গণহত্যা (ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম)
লেলাং গণহত্যা (ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২২শে নভেম্বর। এতে ৩১ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। ঘটনার দিন পাকিস্তানি হানাদারদের বিশাল এক দল রাজাকারআলবদর ও আলশামস বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে লেলাং ইউনিয়নে চড়াও হয়। তারা সকাল প্রায় ৯টা থেকে ভিন্ন-ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে অতর্কিতে ঢুকে একের পর এক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় গ্রামের লোকজন প্রাণভয়ে ধানক্ষতে ও ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সঙ্গে থাকা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যরা সেখান থেকে অনেককে ধরে আনে এবং যাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে সন্ধেহ হয়, তাকেই হানাদারদের হাতে তুলে দেয়। হানাদাররা সঙ্গে- সঙ্গে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে সারা দিনব্যাপী পুরো লেলাং ইউনিয়নে হানাদাররা গণহত্যা চালায়। তারা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ার প্রায় সব বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে সন্ধ্যার আগে এলাকা ত্যাগ করে। সেদিন এ ইউনিয়নে হানাদারদের গুলিতে ৩১ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। তাদের মধ্যে জহুরুল ইসলাম, মো. ইউনুছ, ফয়েজ আহমদ, তোফায়েল আহমদ, মো. সোলায়মান, জহির আহমদ, রুহুল আমিন, মো. ইউনুছ, কৃষ্ট হরি, সুধাংশু, জীবন হরি, মো. জমিল, চিকন মিয়া, মাহবুবুল আলম, ভবেশ চন্দ্র বড়ুয়া, আহমদ ছফা-১, জহুরুল হক, আহমদ ছফা-২, আহমদ ছফা-৩, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ জসিমউদ্দিন ও ফজলুল কবিরের নাম জানা গেছে। হানাদার বাহিনী চলে যাবার পর গ্রামবাসীরা রাতের আঁধারে এসে যেখানে যে প্রাণ হারায় সেখানেই তাকে মাটিচাপা দেয়। সৈয়দুল হক নামে একজন গুলিতে আহত অবস্থায় পড়েছিল। মাটিচাপা দেয়ার সময় এলাকাবাসী তাকে জীবিত দেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে সে বেঁচে যায়। লেলাং গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড