You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে লোহাগাড়া উপজেলা (চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে লোহাগাড়া উপজেলা (চট্টগ্রাম)

লোহাগাড়া উপজেলা (চট্টগ্রাম) কক্সবাজার ও পার্বত্য বান্দরবান সীমানার একটি জনপদ। ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। ১৯৮৩ সালে লোহাগাড়া থানা গঠন করা হয়। এর আগে এটি ছিল সাতকানিয়া থানার অংশ। ৬৬-র ৬-দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সহ পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এ অঞ্চলের মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অবিভক্ত সাতকানিয়া ও কক্সবাজারের চকরিয়া থানার অংশ নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু ছালেহ এমএনএ এবং লোহাগাড়াসহ সাতকানিয়ায় সেরাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপিএ নির্বাচিত হন। তাঁদের নেতৃত্বে এ অঞ্চলের মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মার্চের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং সাতই মার্চের ভাষণ-এ তিনি স্বাধীনতার আহ্বান জানালে লোহাগাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
৭ই মার্চের পর লোহাগাড়ায় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন আবু ছালেহ এমএনএ, অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন (সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক), হাজী গোলাম কাদের, শফিউর রহমান সওদাগর, মৌলভী সরওয়ার কামাল, এম এ গফুর, মাস্টার আবিদুর রহমান, জানে আলম প্রমুখ। পার্বত্য এলাকার বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের শিল্প-কারখানার শ্রমিকরাও আবু ছালেহ এমএনএ ও অধ্যাপক নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশ নেয়। লোহাগাড়া ও আজিজনগরের মধ্যে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন নুরুল ইসলাম (লেখক স্বয়ং, যিনি লোহাগাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং লামা উপজেলার আজিজনগর সংগ্রাম পরিষদের সেক্রেটারি ছিলেন)। আন্দোলনের এক পর্যায়ে লোহাগাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি গঠন করা হয়। এখানকার তরুণ সম্প্রদায় এতে যোগদান করে। স্বেচ্ছাসেবকরা দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলাউজান সুখছড়ি গৌরসিন্ধুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। উপজেলার পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ক্যাম্প পরিচালক ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলার এ কে এম সমশুল আলম (সিইনসি)। পরে উক্ত ক্যাম্প স্থানান্তর করা হয় পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের কেজুপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।
সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ইপিআর বাহিনীর সদস্য কাদের মোল্লা এবং রায় সাহেব। অপর একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল পদুয়া ইউনিয়নের ধলিবিলার হানিফার চরে। এ ক্যাম্পের পরিচালক ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিরাবাদের শফিউর রহমান সওদাগর।
লোহাগাড়া উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য সংগঠকরা হলেন- আবু ছালেহ এমএনএ (সাতকানিয়া), অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন (লোহাগাড়া), ইঞ্জিনিয়ার ছিদ্দিক আহমদ (লোহাগাড়া), শফিউর রহমান সওদাগর (আমিরাবাদ), হাজী গোলাম কাদের (লোহাগাড়া), মৌলভী সরওয়ার কামাল (পদুয়া), এম এ গফুর (লোহাগাড়া), জানে আলম (লোহাগাড়া), সৈয়দ আবদুল মাবুদ (আমিরাবাদ), মোস্তাফিজুর রহমান (আমিরাবাদ), নুরুল ইসলাম (লোহাগাড়া), মো. এমরান (পল্লী চিকিৎসক, লোহাগাড়া), জামাল আহমদ খলিফা (বড়হাতিয়া) প্রমুখ। এখানকার যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন এ কে এম সমশুল আলম (সিইনসি, ছাত্রনেতা)।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামের (দক্ষিণ এলাকা) কালুরঘাট ব্রিজ থেকে বোয়ালখালী ও পটিয়াসহ লোহাগাড়া-সাতকানিয়া এবং পাবর্ত্য লামার আজিজনগর শিল্পাঞ্চল ছিল স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। তখন এ অঞ্চলে উড়ছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। এ-সময় প্রাথমিক প্রতিরোধ হিসেবে কালুরঘাট ব্রিজের নিকট বাঙালি সৈনিকরা অবস্থান নেন। তাঁদের জন্য লোহাগাড়া থেকে খাবার সংগ্রহ করে পাঠানো হতো। ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার জুমার নামাজের শেষ পর্যায়ে লোহাগাড়া বটতলী মোটর স্টেশনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুটি যুদ্ধ বিমান থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। অনেক দোকানপাট পুড়ে যায়।
১৬ই এপ্রিল বিমান আক্রমণের পর পাকবাহিনী ঐদিন লোহাগাড়ায় অনুপ্রবেশ করে এবং সাঁজোয়া ট্রাকে করে টহল দিতে শুরু করে। তারা পার্বত্য লামার আজিজনগর শিল্পাঞ্চলেও টহল দিত। অনেক সময় আজিজ উদ্দিন ইন্ডাস্ট্রিজে অবস্থান করে দোহাজারীতে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প ও চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যেত।
পাকহানাদার বাহিনী লোহাগাড়ায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা তৎপর হয়ে ওঠে। লোহাগাড়া সদরের মোস্তাফিজুর রহমান সওদাগর ও নিকটস্থ আমিরাবাদের উকিলপাড়ার মোহাম্মদুল হকের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে এখানকার অধিকাংশ গ্রামে গড়ে তোলা হয় রাজাকার, আলবদর ও মুজাহিদ বাহিনী। এখানে রাজাকারদের সংখ্যা ছিল বেশি এবং তারাই ছিল বেশি তৎপর। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত থাকত।
বটতলীতে বদিয়র রহমান মার্কেটের প্রথম তলায় লোহাগাড়া টেলিকম এক্সচেঞ্জের পাশে রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। লোহাগাড়ার রাজাকার, আলবদর ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের প্রায় সব তৎপরতা চলত এ ক্যাম্প থেকে। আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা আজিজুল উলুম মাদ্রাসায় (বলির-অ মাদ্রাসা নামে পরিচিত) রাজাকারদের একটি বড় ক্যাম্প ছিল। পাকবাহিনীর সদস্যরা এ ক্যাম্পে যাতায়াত করত। তাদের দোসর বিহারিরাও এখানে আসা-যাওয়া করত। এছাড়া পদুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল কার্যালয়ে একটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল। চুনতি ইউনিয়নে ৩টি রাজাকার ক্যাম্প ছিল। এসব ক্যাম্পে রাজাকার, আলবদর ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এছাড়া দোহাজারীতেও তাদের প্রশিক্ষণ দেয় হতো।
এ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা হলো- লোহাগাড়ার মোস্তাফিজুর রহমান সওদাগর ও হাকিম মিয়া মেম্বার, আমিরাবাদের মোহাম্মাদুল হক, নওশা মিয়া, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, আবদুল মোনাফ ও আবুদল মতিন চৌধুরী, পদুয়ার আবদুল মকছুদ (মকছুদ ফকির) ও নুরুল হক, বড়হাতিয়ার আবুল খায়ের, ফোরক আহমদ চৌধুরী, আবদুল কুদ্দুছ, মাওলানা বজল, মোহাম্মদ ইসমাইল ও ছিদ্দিক আহমদ মেম্বার এবং উত্তর সুখছড়ীর গোলাম রহমান। এখানকার রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা হলো- পুটিবিলার মোহাম্মদুল হক কমান্ডার ও মৌলানা হাসান আলী, বড়হাতিয়ার মৌলভী আবদুল ওয়াহেদ, আবদুল আজিজ, আবদুল করিম ও আবুল হোসেন, দক্ষিণ সুখছড়ির নেছারুল হক ও মো. আমিন, চুনতির আবদুল মাবুদ, মোহাম্মদ ইসমাইল, আবদুল কুদ্দুছ, আবদুল শুক্কুর আনছারী, গুরা মিয়া, হাফেজ মফজনর রহমান, হাফেজ আবদুর রহমান ও মৌলভী মোহাম্মদ আলী, আধুনগরের সৈয়দ এ আলিম, নজির আহমদ, মুহাম্মদ হাফেজ ও ফয়েজ আহমদ, পশ্চিম কলাউজানের মোহাম্মদ আবুল কাসেম, মো. আবদুল কাদের, মো. কামাল উদ্দিন ও মাহফুজুর হক খতিবি, পদুয়ার নুরুল আমিন, আমিরাবাদের বজলুল কবির, সলিম উল্লাহ ও গোলাম রহমান এবং লোহাগাড়ার ডা. ফরিদুল আলম।
পাকবাহিনীর একটি দল ১৮ই এপ্রিল দুপুরে আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সুখছড়ী গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আগুন দেয়। এতে পাড়ার অধিকাংশ বসতবাড়ি পুড়ে যায়। পাকসেনারা এখানে গুলি করে ৭ জন মানুষকে হত্যা করে, যা সুখছড়ি গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। গণহত্যায় নিহতদের এলাকায় মাটিচাপা দেয়া হয়। পাকসেনারা বামুন বাড়ির এক মেয়েকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে। দোসরদের সহযোগিতায় তারা এলাকায় লুণ্ঠন চালায়। ২৯শে এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তারা পৃথক দুটি সাঁজোয়া ট্রাকে করে লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নে ঢুকে পড়ে এবং বণিক পাড়া ও ব্রাহ্মণ পাড়ায় হামলা চালায়। তারা এদু পাড়ায় ২০ জন লোককে হত্যা করে। গণহত্যায় নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। এটি এদুপাড়া গণহত্যা নামে পরিচিত। পাকবাহিনীর দোসররা বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতে লুণ্ঠন চালায় এবং গান পাউডার দিয়ে বাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে বেশ কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে (স্বাধীনতার পর তারা স্বধর্মে ফিরে যায়)। আধুনিক ইউনিয়নের পালপাড়ায় হানা দিয়ে হানাদাররা তাদের দোসরদের সহযোগিতায় অনেক বসতঘরে লুটপাট চালায় এবং পরে সেগুলো জ্বালিয়ে দেয়। এতে বহু পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। শান্তি কমিটির সদস্যরা বড়হাতিয়া ইউনিয়নের সেনপাড়া, রুদ্রপাড়া ও বারইপাড়ার ৫০ জনের মতো হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোককে ধরে নিয়ে যায় সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট। এরপর তাদের নেয়া হয় পটিয়ার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে। তারা ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে প্রাণে রক্ষা পায়। ফিরে এসে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে (তবে স্বাধীনতার পর তারা স্বধর্মে ফিরে যায়)।
বিভিন্ন সময়ে পাকবাহিনী লোহাগাড়ায় ৩ জন, মল্লিক ছোবহানে ৫ জন, কলাউজানে ৩ জন ও বড়হাতিয়ায় ২ জনকে হত্যা করে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজাকাররা চুনতি ইউনিয়ন থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০ জন লোককে ধরে নিয়ে যায় এবং দোহাজারীতে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। এটি দোহাজারী গণহত্যা বলে পরিচিত। স্বাধীনতার পর সাতকানিয়া থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা রুজু করা হয় (মামলা নং ৩, তারিখ ১১/১/১৯৭২ইং; মামলার বাদী চুনতি ইউনিয়নের বাসিন্দা রোহানী মোহন দে)। মামলায় চুনতির রাজাকার কামান্ডার আবদুর মাবুদসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়। পরে ১৯৭৬ সালে জিয়া সরকারের পক্ষ থেকে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়৷ এছাড়া হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দুশতাধিক বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। জানমালের অনিশ্চয়তায় ঘরবাড়ি ছেড়ে অসংখ্য মানুষ ভারতে চলে যায়। ১০ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল আমিরাবাদ ইউনিয়নে হানাদার বাহিনীর দোসর আবদুল মোনাফ হাজীর বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। এতে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমদ কন্ট্রাক্টর ও মুস্তাফিজুর রহমান। আমিরাবাদ রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন-এ মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল উদ্দিন শহীদ হন।
নভেম্বর মাসে দুবার মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে বটতলী টেলিফোন এক্সচেঞ্জের পাশের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এ কে এম সামছুল আলম (সিইনসি)-এর নেতৃত্বে পার্বত্য লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের কেজু পাড়ার মুক্তিযোদ্ধারা এ অপারেশনে অংশ নেন, যা বটতলী রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন নামে পরিচিত। এতে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা
আহত হন।
৭ই সেপ্টেম্বর একদল মুক্তিযোদ্ধা আমিরাবাদের রাজঘাটা আজিজুল উলুম মাদ্রাসা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। সুলতান আহমদ কন্ট্রাক্টরের নেতৃত্বে পদুয়া ইউনিয়নের ধলিবিলা হানিফা চর ক্যাম্পের সুলতান আহমদ কন্ট্রাক্টর গ্রুপ-এর মুক্তিযোদ্ধারা এ অপারেশনে অংশ নেন। আজিজুল উলুম মাদ্রাসা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন-এ অনেক রজাকার আহত হয় এবং রাজাকাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ১৪ই ডিসেম্বর লোহাগাড়া উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। ঐদিন উপজেলায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। লোহাগাড়া উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- মেজর নাজমুল হুদা (আমিরাবাদ, ২৭শে সেপ্টেম্বর ভারতের শিলিগুড়িতে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে ফেরার পথে শহীদ হন; তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়), রনজিত কুমার (আমিরাবাদ, ১লা ডিসেম্বর সাতকানিয়া থানার চুরামণি রাজাকার ক্যাম্পে তাঁর হাতে-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়), মো. ইউছুপ (পূর্ব কলাউজান; খাগড়াছড়ির যুদ্ধে শহীদ) এবং সুভাষ মজুমদার (আমিরাবাদ; ১০ই নভেম্বর চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়িতে পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ)।
,উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে শহীদ মেজর নাজমুল হকের নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ মেজর নাজমুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১৯৯১ সালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের পাশে লোহাগাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রশিক্ষণকেন্দ্র পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি স্মৃতিস্মারক। [নুরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড