লাহিড়ীর হাট বধ্যভূমি (রংপুর সদর)
লাহিড়ীর হাট বধ্যভূমি (রংপুর সদর) রংপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদাররা এখানে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
রংপুর সদর উপজেলার চন্দন পাট ইউনিয়নের লাহিড়ীর হাট সংলগ্ন পুকুর পাড়ের বধ্যভূমিতে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা পর্যায়ক্রমে বহু লোককে হত্যা করে। এখানে একদিনে হানাদার পাকসেনারা ৩২ জনকে গুলি করে হত্যা করে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে রংপুর- বদরগঞ্জ সড়কের ১০০ গজ দক্ষিণে এ পুকুরের অবস্থান। লাহিড়ীর হাট বধ্যভূমিতে ৭ই মে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা ৩২ জন মানুষকে পাকসেনারা গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের বেশিরভাগ সদর থানার রাধাবল্লভ, সাতগাড়া, দামোদরপুর, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, দেওডোবা প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দা। ৭ই মে ছাড়া আরো অনেকবার এখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে এনে হত্যা করা হয়।
৭ই মে নিহতদের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— মনোয়ার হোসেন বেনু (পিতা আবেদ আলী সরদার, রাধাবল্লভ, রংপুর), নওয়াব আলী বাপাত (পিতা শমসের আলী পেয়াদা, সাতগাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, রংপুর), আব্দুল করিম (পিতা আব্দুল মজিদ, পীরজাবাদ, রংপুর), আজগার আলী (পিতা শমসের আলী পানাতি, দামোদরপুর, রংপুর), সেকেন্দার আলী (পিতা আমীর উল্লাহ শাহ্, দামোদরপুর, রংপুর), মন্টু মিয়া (পিতা সেকেন্দার আলী, দামোদরপুর, রংপুর), শাহ্ মো. নূরল আনাম (পিতা নয়া মিয়া, দামোদরপুর, রংপুর), আজাহার আলী (পিতা খোদা বক্স মৌলভী, দামোদরপুর, রংপুর), আব্দুস সাত্তার (পিতা নছির উদ্দিন, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), মোফাজ্জল হোসেন (পিতা বাতাসু মিয়া, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), নবান মিয়া (পিতা আব্দুল মুকিত, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), আব্দুল আজিজ (পিতা কান্দুরা মিয়া, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), এশরাত উল্লাহ (পিতা খোকা মামুদ, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), নূরুল ইসলাম (পিতা আব্দুল, গফুর, আব্দুস সোবহান (পিতা করিম উদ্দিন মুন্সি, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), ইয়াছিন আলী (পিতা আলিম উদ্দিন, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), সোলেমান মিয়া (পিতা আলিম উদ্দিন, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), আব্দুর রাজ্জাক (পিতা হাছেন আলী, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), মনসুর আলী (পিতা মিয়াজান মিয়া, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), লুৎফর রহমান (পিতা শহর উদ্দিন, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), আব্দুর রহিম (পিতা আব্দুল জব্বার, ন্যাকারটারি, বড়বাড়ি, রংপুর), আজগার আলী (পিতা আমিন উদ্দিন, দেওডোবা, বড়বাড়ি, রংপুর), মহবুল হক (পিতা আব্দুল গফুর, দেওডোবা, বড়বাড়ি, রংপুর), নছির উদ্দিন (পিতা কলিম উদ্দিন, দেওডোবা, বড়বাড়ি, রংপুর), আকাব্বর আলী (পিতা আতিয়ার রহমান, দেওডোবা, বড়বাড়ি, রংপুর), মনসুর আলী (পিতা মছির উদ্দিন, দেওডোবা, বড়বাড়ি, রংপুর) ও আব্দুল জব্বার মিয়া (পিতা খট্টু শেখ, দেওডোবা, বড়বাড়ি, রংপুর)।
লাহিড়ীর হাটের এ বধ্যভূমি থেকে প্রায় ৩ শত গজ পশ্চিমে হল্লাইপাড়। সেখানে লাহিড়ীর হাট হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। রংপুর-বদরগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন এ স্থানের উত্তরদিকে একটি বিশাল গর্তে ১৫- ২০ জন মানুষকে হত্যা করে লাশ তার ভেতর ফেলে দেয়া হয়। [গীতিময় রায়]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড