বীর বিক্রম লিলু মিয়া
লিলু মিয়া, বীর বিক্রম ল্যান্স নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়মুতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সোনা মিঞা এবং মাতার নাম সাইরননেছা।
লিলু মিয়া ১৯৭১ সালে দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের ৯নং উইং-এ ল্যান্স নায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ তাঁকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। মার্চের উত্তাল দিনিগুলো প্রত্যেক বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্র এবং ২৫শে মার্চ বাঙালিদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা লিলু মিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করে। ২৬শে মার্চ ঠাকুরগাঁও শহরের রাজপথে জনতা বেরিয়ে আসে। তারা রাস্তায়-রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং বাঙালি ইপিআর সদস্যদের প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দিতে আহ্বান জানায়। ২৮শে মার্চ রাতে লিলু মিয়াসহ বাঙালি ইপিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করেন। উইং-এর অবাঙালি সেনাদের সঙ্গে তাঁদের লড়াই শুরু হয় এবং ৩০শে মার্চ পর্যন্ত তা চলে। তাতে অনেক অবাঙালি ইপিআর ও পাকসেনা নিহত হয়। এভাবে লিলু মিয়া মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন নিয়ে তাঁরা দেবীগঞ্জ, শিবগঞ্জ, খানসামা, জয়গঞ্জ ও ঝাড়বাতীতে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করেন। তাঁরা চাচ্ছিলেন পাকসেনাদের গতি যেন রুদ্ধ হয়। প্রতিরোধের এ প্রথম পর্যায়ে মুক্তিসেনাদের ছিল অনেক সীমাবদ্ধতা। তাঁদের না ছিল পর্যাপ্ত গোলাগুলি, না ছিল অন্যান্য প্রয়োজনীয় রসদ। বিভিন্ন বিদ্রোহী সেনাদলের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল দুর্বল। একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানের সঙ্গে অপর একটির যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল রানার। এক সময় রানারের দায়িত্ব দেয়া হয় লিলু মিয়াকে। তিনি যেমন ছিলেন বিশ্বস্ত, তেমনি ছিলেন কৌশলী ও অকুতোভয়। তিনি একই সঙ্গে যুদ্ধও করতেন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে লিলু মিয়া মোটর সাইকেলে করে এক প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে আরেক প্রতিরক্ষা অবস্থানে সংবাদ পৌছানোর কাজে যাচ্ছিলেন। দিনাজপুর-সৈয়দপুর সড়কের দশমাইল নামক স্থানে তিনি পাকসেনাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। সেখানে পাকসেনাদের ঘাঁটি ছিল। পাকবাহিনী দূর থেকে নিশানা করে তাঁকে গুলি করলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দশমাইল এলাকার মাটি তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয়। তাঁর মৃতদেহ পরে গ্রামবাসী অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে সেখানে সমাহিত করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার লিলু মিয়া-কে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ললিতা বেগম। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড