মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় বাহিনী লুৎফর বাহিনী (নোয়াখালী সদর)
লুৎফর বাহিনী (নোয়াখালী সদর) মুক্তিযুদ্ধকালে নোয়াখালী জেলায় গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় একটি বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বাহিনী এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বাহিনীর প্রধান সুবেদার মেজর লুৎফর রহমান ১৯২৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ১নং জয়াগ ইউনিয়নের আনন্দীপুর গ্রামের হামিদ উল্লাহ মুন্সী পণ্ডিত বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বশির উল্লাহ মুন্সী।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই নোয়াখালীতে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য আব্দুল মালেক উকিল এমএনএ-কে আহবায়ক করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে সেনাসদস্য, আনসার, পুলিশ, ইপিআর,
আওয়ামী লীগ, লুৎফর রহমান বাহিনী প্রধান ছাত্রলীগ সহ সবদল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা শুরু হয়। ২৬শে মার্চ সংগ্রাম কমিটি প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারি অস্ত্রাগার থেকে বেশকিছু গোলাবারুদ ও রাইফেল পায় এবং তা দিয়ে মাইজদী প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়। নোয়াখালী ২২শে এপ্রিল পর্যন্ত শত্রুমুক্ত থাকলেও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে লাকসাম হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৩শে এপ্রিল নোয়াখালীতে অবস্থান নেয়। ইতোমধ্যে ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ায় এবং কৌশলগত কারণে জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অধিকাংশই ভারত গমন করেন।
নোয়াখালীর প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনায় মুক্তিযোদ্ধাদের যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছিল, এপ্রিলের শুরুতে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর সুবেদার লুৎফর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের মধ্য দিয়ে তা আরো জোরদার হয়। এরপর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল করিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুবেদার লুৎফর রহমানের ওপর নোয়াখালীর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। দায়িত্ব পেয়ে সুবেদার লুৎফর নোয়াখালীকে শত্রুমুক্ত রাখতে পরিকল্পনা শুরু করেন। এজন্য তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশের ৭৬ জন নিয়মিত সৈন্যের সমন্বয়ে নোয়াখালীর প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান নেন।
১০ই এপ্রিল কুমিল্লার লাকসামে প্রথমবার লুৎফর বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দলের সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে ২০শে এপ্রিল নোয়াখালীমুখী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলকে তাঁরা নাথেরপেটুয়াতে বাঁধা দেন। ২১শে এপ্রিল পুনরায় এ অগ্রসরমাণ শত্রুসৈন্যদের সোনাইমুড়ী রেলস্টেশনে এম্বুশ করা হয়।
পাকিস্তানি সৈন্যরা অতি দ্রুত নোয়াখালীর অধিকাংশ দখল করে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুরের দিকে অগ্রসর হলে ফেনাঘাটার জয়নারায়ণপুর ব্রিজের নিকট লুৎফর বাহিনীর একটি দলের দ্বারা আক্রান্ত হয়। লুৎফর বাহিনীর একটি গ্রুপের কমান্ডার সফি উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত এ আক্রমণে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ বাজারে পাকিস্তানি সৈন্যরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পরদিন বগাদিয়ার বিপুলাশহরে লুৎফর বাহিনীর পরিকল্পনায় শত্রুসৈন্যদের একটি দলকে এম্বুশ করা হয়। কিন্তু এ ধরনের ছোট এবং অসংগঠিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাহীন প্রতিরোধের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। তারা অচিরেই নোয়াখালী শহরসহ অধিকাংশ থানা সদর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। এমন অবস্থায় ২৯শে এপ্রিল আবিরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাছাই করা হয় এবং সুবেদার অলিউল্লাহ, সুবেদার শামছুল হক, হাবিলদার মমতাজ, হাবিলদার রুহুল আমীন ও হাবিলদার জামালকে গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এ সভায় সুবেদার লুৎফর রহমানের সামরিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নোয়াখালীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে কয়েকজন গ্রুপ কমান্ডারের অধীনে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ২রা মে আবিরপাড়ায় আওয়ামী লীগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ৭০-এর এমএনএ খালেদ মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি করে সংগ্রাম কমিটি পুনর্গঠন করা হয় এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন দলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণেই সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাহিনী নোয়াখালীতে মুক্তিযুদ্ধ করে। ৩রা মে ক্বারী করিম উল্লাহর ছয়ানীড় বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিরক্ষার জন্য মোশাররফ হোসেনকে গ্রুপ কমান্ডার করে একটি দলকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ তৎপরতায় জুন মাসে বাংলাদেশের সমগ্র রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং নোয়াখালীর বৃহত্তম অংশ এ বিভাজনে ২নং সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরের অধীনে ন্যস্ত হয়। এ সাব- সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের অধীনে লুৎফর বাহিনী নিয়ে গঠিত হয় ১৩নং কোম্পানি এবং সুবেদার লুৎফর রহমান এর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য লুৎফর বাহিনীকে এ-সময় ৫টি জোনে বিভক্ত করা হয়। এসব জোন ও এর কমান্ডারগণ হলেন- জোন ‘এ’ (আলফা)— নায়েক সুবেদার ওয়ালি উল্লাহ ও রুহুল আমিন ভূঁইয়া, জোন ‘বি’ (ব্রেভো)— সুবেদার শামছুল হক, জোন ‘সি’ (চার্লি)— মোশাররফ হোসেন, জোন ‘ডি’ (ডেল্টা)— রফিক উল্লাহ, জোন ‘ই’ (ইকো)— আবুল কালাম আজাদ। এ বিভাজনের ফলে সুবেদার লুৎফরের ওপর নোয়াখালী সদর অঞ্চলের প্রতিরক্ষার ভার পড়ে। এতে তাঁর বাহিনীর কার্যক্রম নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লেও তা আরো চ্যালেঞ্জিং হয়। কারণ, নোয়াখালী সদর ইতোমধ্যে পাকিস্তানি সেনাবহিনী ও তাদের সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এ কারণে সুবেদার লুৎফর রহমান তাঁর বাহিনীকে সেপ্টেম্বর মাসে ৪ ভাগে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা শুরু করেন। বিভাজনটি ছিল এরূপ- সদর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ সুবেদার লুৎফর রহমান স্বয়ং, সদর দক্ষিণ-পূর্ব – সুবেদার অলি উল্লাহ, সদর পূর্ব-উত্তর – নায়েক সুবেদার শামছুল হক এবং সদর পূর্ব-পশ্চিম – নায়েক সুবেদার ইসহাক। উল্লিখিত সামরিক সংগঠনের বাইরে লুৎফর বাহিনীর অধীন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রপস্ ছিল। নায়েক আবুল হোসেনের নেতৃত্বে এ ট্রপস্ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করত। অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বেসামরিক জনগণের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দল ছিল। চিকিৎসকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন ডা. আনিসুজ্জামান, ডা. নুরেজ্জামান চৌধুরী, ডা. কৃষ্ণ গোপাল, ডা. নগেন্দ্র কুমার সাহা, ডা. লুৎফর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও, লুৎফর বাহিনী যুদ্ধকালে বিঘ্নিত আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। লুৎফর রহমান ও তাঁর বাহিনীর আয়ত্তাধীন এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ডাকাত, দুষ্কৃতিকারী ও রাজাকারদালালদের শাস্তি দিয়ে, প্রয়োজনে হত্যা করে অপরাধীদের হুঁশিয়ার করে দেন। ফলে অতিশীঘ্রই লুৎফর বাহিনীর ওপর স্থানীয় জনগণের আস্থা তৈরি হয়।
২৩শে এপ্রিল নোয়াখালী শত্রুবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবার পর বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের লুৎফর রহমান সংগ্রাম কমিটির কয়েকজনের সহায়তায় পুনরায় সংগঠিত করতে শুরু করেন। স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণের জন্য লুৎফর বাহিনী নোয়াখালী সদর মহকুমাসহ বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো হলো- ১নং পিতাম্বরপুর জব্বার কন্ট্রাক্টরের বাড়ি, ২নং উলুপাড়া পরানপুর ভূঁইয়া বাড়ি, পাল্লা বাজার, চাটখিল পাটোয়ারী বাড়ি, খিলপাড়া স্কুল মাঠ, কড়িহাঁটি স্কুল মাঠ, আবিরপাড়া স্কুল মাঠ, কালিকাপুর, দেওটি, জয়াগ, নান্দিয়াপাড়া স্কুল মাঠ, বদল কোর্ট চেয়ারম্যান বাড়ি, পাঁচগাও কাচারি বাজার ইত্যাদি।
নোয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ পর্বে অস্ত্রশস্ত্র ছিল খুবই হালকা ধরনের। প্রথমদিকে অস্ত্র বলতে ছিল ১টি এসএমজি, ২টি স্টেনগান, কিছু ৩০৩ রাইফেল, কয়েকটি হাত বোমা ও ৪-৫টি গাদা বন্দুক। অস্ত্রের প্রয়োজনে সংগ্রাম কমিটির সদস্যসহ সুবেদার লুৎফর রহমান তৎপর হন। এ- সময় সুবেদার লুৎফরকে ২৩টি রাইফেল সংগ্রহ করে দেন মোশাররফ হোসেন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আলী আহমদ চৌধুরীর সহযোগিতায় নোয়াখালী খালের দক্ষিণের চর এলাকা থেকে ৫১টি রাইফেল পাওয়া যায়। এসব অস্ত্রের বাইরেও বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে অস্ত্রসহ পালিয়ে আসা সদস্যদের অস্ত্রশস্ত্রও লুৎফর বাহিনীর অস্ত্র চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া লুৎফর বাহিনীর অস্ত্রের মূল উৎস হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদালালদের অস্ত্রশস্ত্র। অধিকন্তু লুৎফর বাহিনী ২নং সেক্টর কমান্ডারের নিকট থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দফায় বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেছিল। সুদোর লুৎফর রহমান সংগৃহীত এসব অস্ত্রশস্ত্র রাখার জন্য নির্দিষ্ট এবং একক কোনো স্থান ব্যবহৃত হয়নি। তবে, অস্ত্রাগার হিসেবে সুবেদার লুৎফর তাঁর নিজ বাড়ি (আনন্দীপুর), সুবেদার শামছুল হকের উলুপাড়ার বাড়ি, কানকিরহাটের হাজি ইদ্রিসের বাড়ি, কাদিরপুরের সেকান্দার উকিলের বাড়ি, উলুপাড়ার দরবান বাড়ি, আব্দুল লতিফ বিলাতির বাড়ি ইত্যাদি স্থান ব্যবহার করতেন।
এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত লুৎফর বাহিনী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী অঞ্চলের বৃহত্তর অংশে তাঁদের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখেন। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে ২নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স সুবেদার লুৎফর রহমানের ওপর নোয়াখালী সদর এলাকা রক্ষার ভার অর্পণ করে। সে হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত এ বাহিনী কুমিল্লার লাকসাম, পুরো নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, রায়পুর ও ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অংশে সক্রিয় ছিল। আগস্ট থেকে ডিসেম্বরে বিজয় অবধি এ বাহিনীর কার্যপরিধি ছিল নোয়াখালী সদর অঞ্চল।
লুৎফর বাহিনী যুদ্ধের প্রায় পুরো সময় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। শত্রুসৈন্যের গমনাগমন পথে আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করে তাদের হতাহত করা এবং তাদের যাতায়াত যাতে নির্বিঘ্ন, ভীতিহীন ও চ্যালেঞ্জহীন না হয়, সেটিই এ বাহিনীর অন্যতম প্রধান যুদ্ধ কৌশল ছিল। এছাড়া কখনো-কখনো বিশেষ করে যুদ্ধের শেষদিকে এ বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়৷
লুৎফর বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দালালদের সঙ্গে কমপক্ষে ৪০টি যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সেগুলোর মধ্যে লাকসাম যুদ্ধ, নাথেরপেটুয়া যুদ্ধ, ফেনাঘাটা যুদ্ধ, বগাদিয়া যুদ্ধ, মীরগঞ্জ যুদ্ধ, নদনা যুদ্ধ, মান্দারিবাজার যুদ্ধ, বসুরহাট যুদ্ধ, আমিনবাজার যুদ্ধ, সোনাইমুড়ী-চাটখিল যুদ্ধ, ওদারহাট যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে সুবেদার লুৎফর রহমান সেনাবহিনীর চাকরিতে বহাল হন। তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৭৭ সালে অবসরে যান। অবসর গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [মিথুন সাহা]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড