লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস রোড বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর)
লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস রোড বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর) লালমনিরহাট সদর উপজেলায় অবস্থিত। লালমনিরহাট পৌরসভা থেকে বাবুপাড়া হয়ে ফায়ার সার্ভিসের দিকে যাওয়া সড়কটি ফায়ার সার্ভিস রোড নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সড়কের ওপর এবং সড়ক সংলগ্ন এলাকায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর বিহারিরা বহু লোককে হত্যা করে। নিহতদের বেশিরভাগ ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টও তাদের নাম-পরিচয় সংরক্ষণ করেনি। মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের লাশ দীর্ঘদিন ফায়ার সার্ভিস রোডে পড়ে ছিল। লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস রোডের বর্তমান বাসিন্দা এবং গণহত্যায় নিহত মতিউর রহমানের পুত্র মো. মনোয়ার হোসেন (৬১) জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস রোডে তিনি ১০-১২টি মাথার খুলি পড়ে থাকতে দেখেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস রোডের বর্তমান লেবু বাগান এলাকাতেও শতাধিক মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পড়ে থাকতে দেখেন। মনোয়ার হোসেনের বন্ধু সাইফুদ্দিন বাবু (লালমনিরহাট টিএন্ডটির পাশের বাসিন্দা, বর্তমানে ঢাকায় চাকরিজীবী) একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে তাকে জানান। সাইফুদ্দিন বাবু তাদের বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে পালানোর সময় ফায়ার সার্ভিস রোডে ১০-১২ জনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন, যাদের গায়ে ফায়ার সার্ভিসের পোশাক ছিল।
ফায়ার সার্ভিস রোডের স্থায়ী বাসিন্দা শেখ সাদেক সওদাগর (পিতা হাজী শেখ তাহের) এবং সাদেক নওয়াজের বাড়িতে বেড়াতে আসা মসজিদের এক মুয়াজ্জিনকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস রোড সংলগ্ন বাবুপাড়ার অনেকেই গণহত্যার শিকার হন। তাদের মধ্যে শহীদ মতিউর রহমান (পিতা মো. শামসুজ্জোহা, রেলওয়ের স্টেনোগ্রাফার)-কে বাবুপাড়ার বাড়ি থেকে ধরে ট্রলিল্যান্ড (বর্তমান রিক্সা স্ট্যান্ড)-এ নিয়ে হত্যা করা হয়। বাবুপাড়ার মো. তসলিমউদ্দিনের দুই পুত্র ফারুক হোসেন ও আনোয়ার হোসেনও গণহত্যার শিকার হন। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড