You dont have javascript enabled! Please enable it! লালমনিরহাট রেলওয়ে ওভার ব্রিজ সংলগ্ন ট্রলিল্যান্ড বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

লালমনিরহাট রেলওয়ে ওভার ব্রিজ সংলগ্ন ট্রলিল্যান্ড বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর)

লালমনিরহাট রেলওয়ে ওভার ব্রিজ সংলগ্ন ট্রলিল্যান্ড বধ্যভূমি (লালমনিরহাট সদর) লালমনিরহাট সদর উপজেলায় অবস্থিত। রেলওয়ে অফিসারদের বহনকারী রেল ট্রলিগুলো এখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ট্রলিল্যান্ড নামে পরিচিত ছিল। এলাকাটি বর্তমানে রিকশাস্ট্যান্ড নামে পরিচিত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর বিহারিরা ৪ ও ৫ই এপ্রিল ট্রলিল্যান্ডে অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে তারা ট্রলিল্যান্ডকে বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করে। এটি লালমনিরহাট জেলার বৃহত্তম বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত।
পাকবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ৪ঠা এপ্রিল মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে ৫ই এপ্রিল সন্ধ্য্যা পর্যন্ত এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। অধিকাংশ গণহত্যা সংঘটিত হয় রেলওয়ে ওভার ব্রিজ সংলগ্ন ট্রলিল্যান্ডে। দুদিন ধরে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা লালমনিরহাট শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য লোকজন ধরে ট্রলিল্যান্ডে এনে হত্যা করে। ৪ঠা এপ্রিল মধ্যরাতে শহরের সাহেবপাড়া, বাবুপাড়া, সুইপার কলোনি, আপইয়ার্ড কলোনি, সোহরাওয়ার্দী মাঠ, রেলওয়ে হাসপাতাল, রেলকলোনি, থানাপাড়া, গোশালা বাজার, লোকোশেড এলাকা, লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা, রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব, সাপটানা বাজার, স্টোরপাড়া, সুরকি মিল এলাকা, ডালপট্টি রসুলপুর, গাড়িয়ালপট্টি জুম্মাপাড়া, কাজী কলোনি, রামকৃষ্ণ রিফিউজি কলোনি, পুরাতন সিনেমা হল এলাকা, শ্মশান কলোনি, বিএনপি কলোনি, তেলিপাড়া ইত্যাদি এলাকা থেকে বহু লোকজন ধরে তাদের কয়েকজনকে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয়, বাকিদের ট্রলিল্যান্ডে ধরে আনা হয়। এরপর এক সঙ্গে ৫০-৬০ জনের এক একটি দলকে গোল করে দাঁড় করানোর পর ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। এখানে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা হয় ৫ই এপ্রিল। তাই লালমনিরহাটের মানুষ ৫ই এপ্রিলকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে। ঐদিন সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকবার গণহত্যা সংঘটিত হয়। প্রতিটি গণহত্যার সময় ৫০-৬০ জনকে এক সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার করা হতো। সমুন্দর সিং নামে একজন পাকিস্তানি সেনা রেল ব্রিজের ওপর থেকে ব্রাশ ফায়ার করত বলে জানা যায়। এভাবে সারাদিনে কয়েক দফা গণহত্যায় সহস্রাধিক লোককে হত্যা করা হয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রেলওয়ের শতাধিক বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীও এখানে গণহত্যার শিকার হন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিহারিদের সহযোগিতায় রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিপুল সংখ্যক যাত্রী (খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে) সকাল থেকে দফায়-দফায় ট্রলিল্যান্ডে এনে বেঁধে রাখত। বিহারিরা বিভিন্ন স্থান থেকে বাঙালিদের ধরে আনার পর হাত-পা বেঁধে ট্রলিল্যান্ডে লাইন করে দাঁড় করাত। এরপর পাকিস্তানি সেনারা ওভার ব্রিজের ওপর থেকে ব্রাশ ফায়ার করে তাদের হত্যা করত। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অনেকে পানি-পানি বলে আর্তচিৎকার করলে বিহারিরা দা, কুড়াল, কোদাল, বল্লম দিয়ে আঘাত করে অথবা ধারালো অস্ত্রের হুল দিয়ে খোঁচা মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে শহীদদের স্মরণে ট্রলিল্যান্ডে একটি শহীদ স্মৃতি মিনার নির্মাণ করেছে। এখানে রেলওয়ের শতাধিক শহীদ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম সম্বলিত ফলক রয়েছে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড