লালমনিরহাট রেলওয়ে গণকবর (লালমনিরহাট সদর)
লালমনিরহাট রেলওয়ে গণকবর (লালমনিরহাট সদর) লালমনিরহাট সদর উপজেলার রেল স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে ওয়ারলেস কলোনিতে অবস্থিত। এটি লালমনিরহাট জেলার বৃহত্তম গণকবর হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসর বিহারিদের হাতে নিহত সহস্রাধিক মানুষের লাশ এখানে ফেলে দেয়া হয়।
৪ঠা এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও বিহারিরা লালমনিরহাট শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রেলওয়ের বাঙালি কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ কয়েকশত মানুষকে ট্রলিল্যান্ডে ধরে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাদের হত্যা করে লাশগুলো ফেলে দেয়৷ ৫ই এপ্রিল তারা ট্রলিল্যান্ডে এক হাজারের মতো লোককে দফায় দফায় হত্যা করে। পরে নিহতদের লাশগুলো সুইপারদের দ্বারা বর্তমান গণকবরে ফেলে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণকবরের স্থানটি একটি বড় খাল বা পুকুরের মতো ছিল। খালটি অনেক গভীর ছিল। ৪ঠা ও ৫ই এপ্রিল গণহত্যায় নিহতদের লাশের পাশাপাশি লালমনিরহাট শহরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় হত্যা ও গণহত্যার শিকার নিহতদের লাশ এ গণকবরে এনে ফেলা হয়। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, রেলওয়ে গণকবরে কমপক্ষে পঁচিশ হাজার লোকের লাশ রয়েছে, যাদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে হত্যা করার পর লাশ এখানে এনে ফেলা হয়। পাশাপাশি অনেককে ধরে এখানে এনে গুলি অথবা জবাই করে হত্যা করা হয়। বিহারিরা জবাই করে এবং পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা করত।
ওয়ারলেস কলোনি গণকবরের সামনে মুদি দোকানদার মো. ইয়াকুব আলী সর্দার (৬৩) (পিতা ওসমান আলী) জানান, রেলওয়ের গণকবরটি একাত্তরে খাল ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। খালের মধ্যে প্রতিদিন শতশত লাশ এনে ফেলা হতো। অনেককে এ জায়গায় ধরে এনেও হত্যা করা হয়। গণকবরের পাশে এখন যে জমি আছে, সেটাও তখন খাল ছিল এবং বহু লাশ ঐ খালের মধ্যে ফেলা হয়। জিন্নাহ নামের একজন জজের মালিকানাধীন এ খালটি ভরাট করে এখন আবাদি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন অংশটি প্রাচীর দ্বারা ঘিরে গণকবর হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এর পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন বিরাট অংশ (যা লাশের স্তূপে ভরা ছিল) সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ আজো নেয়া হয়নি। এটি এখন ধানক্ষেতে পরিণত হয়েছে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড