You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.08 | লালমাই প্রতিরোধযুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

লালমাই প্রতিরোধযুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা)

লালমাই প্রতিরোধযুদ্ধ (লাকসাম, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ৮ই এপ্রিল। বর্তমান লালমাই উপজেলার (তৎকালীন লাকসাম থানার উত্তরাংশ) লাকসাম-সোনাইমুড়ি ও বরুড়া-চাঁদপুর সড়কের মিলনস্থল (বর্তমান রেডিও স্টেশনের কাছাকাছি স্থান)-এ ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যদের যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা লালমাই প্রতিরোধযুদ্ধ নামে পরিচিত। এটি বৃহত্তর লাকসাম অঞ্চলের প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৫-৬টি গাড়ি ভস্মীভূত হয়, ৮-১০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং ৩০- ৪০ জন আহত হয়। ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ৩ জন আহত হন।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে লাকসাম-চাঁদপুর অভিমুখী পাকিস্তানি সৈন্যরা লালমাইতে এসে প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান, ক্যাপ্টেন দিদারুল আলম, মেজর এনামুল হক চৌধুরী, জাফর ইমাম ও সুবেদার আবদুল জলিল লাল মিয়ার যৌথ নেতৃত্বে এ প্রতিরোধযুদ্ধ হয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত দিক বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের ক্ষেত্র হিসেবে এ স্থানটিকে চিহ্নিত করেন। ৩রা এপ্রিল ৬০-৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা বাগমারার উত্তরে দুতিয়াপুর এবং দত্তপুর পাশাপাশি এদুটি গ্রামে অবস্থান নেন। এ- সময় কুমিল্লায় এক প্লাটুন বাঙালি সৈন্য মোতায়েন ছিল। এ প্লাটুনটির নেতৃত্বে ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার সুবেদার আবদুল জলিল লাল মিয়া। কুমিল্লা থেকে লালমাই হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা চাঁদপুরের দিকে যাবে – এ খবর শুনে তিনি প্লাটুনের সদস্যদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপটির সঙ্গে যোগ দেন। ৮ই এপ্রিল সকাল ১০-১১টার সময় কুমিল্লার দিক থেকে বিপুল পরিমাণ সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল ইস্ট পাকিস্তান রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (ইপিআরটিসি)-এর ১০-১৫টি বাস ও ট্রাকসহ ৩০-৪০টি গাড়ির বহর নিয়ে চাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা লালমাই-চাঁদপুর সড়কের মোড়ে এলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে পাকিস্তানি সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে তাদের ৫-৬টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ১ ঘণ্টার অধিক সময়ব্যাপী স্থায়ী এ-যুদ্ধে ৮-১০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ৩০-৪০ জন আহত হয়। পাকিস্তানি সৈন্যদের বিশাল বহর এবং অত্যাধুনিক ও ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে ৫-৬ কিলোমিটার দক্ষিণে আলীশ্বরের দিকে চলে যান। এ-যুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩ জন আহত হন। [ইমন সালাউদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড