লালমাটিয়া পাকক্যাম্প যুদ্ধ (দিনাজপুর সদর)
লালমাটিয়া পাকক্যাম্প যুদ্ধ (দিনাজপুর সদর) সংঘটিত হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর। এতে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযোদ্ধারা সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই দিনাজপুর সদরের হামজাপুর-খানপুর বর্ডার দিয়ে দিনাজপুর দখলের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। হামজাপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা জর্জ দাস ২৮শে সেপ্টেম্বর কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে শিববাড়ি ক্যাম্প থেকে হামজাপুর ক্যাম্পে রওনা হন। ঐদিনই তাঁরা ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে খানপুর এলাকা দখল করে নেন এবং ক্যাপ্টেন ইদ্রিস সেখানকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জর্জ দাস হামজাপুর সাব-সেক্টর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে গিয়ে যোগ দেন। এ ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন মূর্তি। তাঁর নির্দেশে ৩০শে সেপ্টেম্বর দিনাজপুর সদরের দক্ষিণ কোতোয়ালির ঘুঘুডাঙ্গার লালমাটিয়ায় পাকবাহিনীর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। ৩১ জন সঙ্গীসহ মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান লালমাটিয়া অপারেশনের নেতৃত্ব দেন। তাঁদের পেছনে দ্বিতীয় বাহিনী হিসেবে প্রস্তুত থাকে জর্জ দাস-এর বাহিনী।
মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরের দিকে অতর্কিতে পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করেন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাঁদের একটি অংশ ক্যাম্পের নিকটস্থ আমগাছে উঠে টার্গেট নেয়। বাকিরা ক্রলিং করে ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে গিয়ে পাকবাহিনীর বাংকারগুলো খালি পেয়ে সেখানেই অবস্থান নেন। অন্যদিকে, জর্জ দাসের নেতৃত্বে দ্বিতীয় বাহিনী ঘুঘুডাঙ্গার পার্শ্বস্থ পুনর্ভবা নদীর পাড়ে অবস্থান নেয়। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তাঁরা প্রথম দলকে সহযোগিতা করার জন্য পাকিস্তানি ক্যাম্পের দিকে রওনা দেন। জর্জ দাসের সঙ্গে ছিলেন আমিনুদ্দৌলা, জগলুল পাশা, লুইস, কালা মিয়া, আনিস গাজী প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। এঁরা প্রথমে নদীর পাড়ে শেল্টার নেন। তারপর তাঁরা প্রথম দলের সিগনাল পেয়ে ডোবা, কাদা ও বুকপানি পেরিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছান। অতঃপর দুই দল মিলে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধ শুরু করে। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলা এ সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনী নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণ এসে যোগ দেয়। যুদ্ধে অর্ধশতাধিক পাকসেনা নিহত হয় এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাহসী যোদ্ধা ফজলুর রহমান শহীদ হন। এ-যুদ্ধে একরামুল, দুলু, করিম, গণি, আদম আলী, নাজির উদ্দীন প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। [মাসুদুল হক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড