লালদিঘী বড়দরগা গণকবর (পীরগঞ্জ, রংপুর)
লালদিঘী বড়দরগা গণকবর (পীরগঞ্জ, রংপুর) রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এখানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর অনেক শহীদের কবর রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও বীভৎসতা বেড়ে যায়। তারা নির্বিচারে গুম, খুন, ও জ্বালাও-পোড়াও করতে থাকে। পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করার ফলে ব্যাপক নিরীহ ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সেই সঙ্গে পাকবাহিনীর সহযোগী রাজাকার আলবদর ও আলশামস বাহিনীর অতি মাত্রায় তৎপরতার কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। সারা দেশের ন্যায় পীরগঞ্জ অঞ্চলেও পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে বহু মানুষকে প্রাণ দিতে হয়।
লালদিঘী রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এর পশ্চিমে দিনাজপুরের হিলি ও ভারত এবং পূর্বে মাদারগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা ও ফুলছরি। এ স্থানটি মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনী উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে স্থানটি দখল-প্রতিদখলের পালা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৭ই ডিসেম্বর সংঘটিত যুদ্ধে স্থানটি স্থায়ীভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর দখলে আসে। এ-যুদ্ধে যৌথবাহিনীর বহু যোদ্ধা শহীদ হন। ব্যাপক সংখ্যক পাকসেনা নিহত হলেও পিছু হটার সময় তারা ৩২ বালুচ অধিনায়ক কর্নেল সুলতানের লাশসহ নিহত সৈনিকদের লাশ নিয়ে যায়। আর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর শহীদ যোদ্ধাদের লাশ স্থানীয়দের সহায়তায় লালদিঘী বড়দরগা এলাকায় গণকবর দেয়া হয়। লালদিঘী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়না মাস্টার, ছাত্রলীগ কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুর রহমান রঞ্জু, সেকেন্দার আলীসহ অনেকে এ কাজে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের পর পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, নিহতের লাশের ধর্মীয় সৎকারের সুযোগ ছিল না। কোনোমতে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় শহীদদের নাম- পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। ভাষাগত পার্থক্যের কারণে মিত্রবাহিনীর শহীদ সদস্যদেরও পরিচয় জানা যায়নি। [লুৎফর রহমান সাজু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড