বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০ মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনায়ক লাছমন সিং লেহেল
লাছমন সিং লেহেল, বীরচক্র, পিভিএসএম (জন্ম ১৯২৩) ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০ মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনায়ক। তিনি ১৯২৩ সালের ৯ই জুলাই অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের হোসিয়ারপুর জেলার লেহেল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খালসা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক ও গভর্নমেন্ট ইন্টার কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ ও ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৭ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের অধীনে তাঁর ইউনিটকে বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নিযুক্ত করা হয়। ১৯৪৭-৪৮ সালে তিনি জম্মু ও কাশ্মীর এলাকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকালে (১৯৬৫) তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার ও ১৯৭০ মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি আর্টিলারি স্কুলের গানারি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ সেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর চক্র’ ও ‘পিভিএসএম’ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ১৯৭৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি একাধিক পুস্তক রচনা করেন। তাঁর রচিত পুস্তকসমূহের মধ্যে Missed Opportunities Indo-Pak War 1965, Indian Sword Strikes in East Pakistan, Victory in Bangladesh ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে মেজর জেনারেল লাছমন সিং লেহেল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০ মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হন। স্বল্পতম সময়ে তিনি তাঁর বাহিনীকে নিয়ে হিলি, ফুলবাড়ি, পীরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা, বালুরঘাট, চরখাই, ভাদুরিয়া, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও এর আশপাশের অঞ্চলসমূহ দখল করে এসব স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ও আত্মসমর্পণ ত্বরান্বিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থগুলো সর্বমহলে সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ মেজর জেনারেল লাছমন সিং লেহেল – কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড