You dont have javascript enabled! Please enable it!

লতিফপুর গণহত্যা (লক্ষ্মীপুর সদর)

লতিফপুর গণহত্যা (লক্ষ্মীপুর সদর) সংঘটিত হয় ১৫ই জুন। এটি এ উপজেলার এক নিষ্ঠুর ও নির্মম গণহত্যা। এতে ৩০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়।
লতিফপুর গ্রামটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজার সংলগ্ন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলা নোয়াখালী জেলার একটি মহকুমা ছিল। তখন চন্দ্রগঞ্জ বাজার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। পূর্ব অংশ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলাধীন এবং পশ্চিম অংশ লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলাধীন ছিল।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মে মাসের শুরুতে চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম অংশে অবস্থিত প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুলে শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে। চন্দ্রগঞ্জ বাজারের মাঝখান দিয়ে নোয়াখালী খাল প্রবাহিত। এ খাল ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকায় চলাচল করতেন। এছাড়া পূর্ব বাজারের পাকা পুল যাতে হানাদার বাহিনী নিরাপদে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য তাঁরা এখানে প্রতিরোধব্যূহ গড়ে তোলেন। মুক্তিবাহিনী একাধিকবার এ পুল ধ্বংস করলে পাকসেনারা তা আবার মেরামত করে। এক সময় এ পুলের ওপর দিয়ে হানাদার বাহিনীর চলাচল অনেক বৃদ্ধি পায়। তারা পুলের ওপর ভারী মেশিনগান স্থাপন করে রাস্তার ওপর তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এ অঞ্চলের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার লুৎফর রহমান পুনরায় এ পুল ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৫ পাউন্ড বিস্ফোরক, একটি ডেটোনেটর এবং দেড় মিনিটের ফিউজওয়ার যোগাড় করে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা গভীর রাতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের কঠোর পাহারা ভেদ করে সুকৌশলে চন্দ্রগঞ্জ পুলের এক অংশ ধ্বংস করেন এতে হানাদার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে ১৫ই জুন রাজাকার দের নিয়ে চন্দ্রগঞ্জ বাজার সংলগ্ন পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের নুরু মিয়া মুন্সীর বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালায়। হানাদার বাহিনীর কাছে খবর ছিল এ বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা চন্দ্রগঞ্জ পুলটি বারবার ধ্বংস করছেন। পাকবাহিনী নুরু মিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা আশপাশে হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে আহত করে। তারা অনেক বাড়িঘর লুটপাট শেষে জ্বালিয়ে দেয়।
এ গণহত্যায় নিহত লতিফপুরের ২০ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— শশী ভূষণ পাল (পিতা রাজমোহন পাল), সেকান্দর মিয়া (পিতা হাজী ইলিয়াছ), মজিব উল্যাহ (পিতা আহম্মদ উল্যা), শফিক উল্যাহ মুন্সী (পিতা ছালামত উল্যা), নুরু মিয়া মুন্সী (পিতা মহব্বত আলী), রহমত উল্যা (পিতা নুরু মিয়া মুন্সী), মোখলেছুর রহমান (পিতা মহব্বত আলী), জাফর আহম্মদ (পিতা মিরান আলী), আবু তাহের (পিতা ওবায়দুল্লাহ), করপুন নেছা (স্বামী আবদুল মান্নান), নজির আহম্মদ (পিতা আবদুল হাকিম), শামছুল হক (পিতা মুসা মিয়া), মো. খলিলুর রহমান (পিতা হাবিবুল্লাহ), আবদুর রহমান পাটোয়ারী (পিতা বজলুর রহমান), নুরের জামান (পিতা আনর আলী), আবদুল হক (পিতা নুরের জামান), সুলতান মাস্টার (পিতা আবদুল আলী) মোহাম্মদ উল্যা (পিতা আবদুল আজিজ; মসজিদ বাড়ি), বদিউজ্জামান (পিতা আবদুল আজিজ) ও খলিলুর রহমান ইয়ামিন (পাটারী বাড়ি)। এখানে আহত ব্যক্তিরা হলেন— জগবন্ধু পাল (পিতা রতন কৃষ্ণ পাল), অনুকূল চন্দ্র পাল (পিতা দেবেন্দ্র কুমার পাল), নুর মোহাম্মদ (পিতা আহম্মদ উল্যা), নুরুজ্জামান (পিতা আনোয়ার আলী), আবদুল হক (পিতা নুরুজ্জামান), ইউছুফ মিয়া (পিতা মহব্বত আলী) ও নুরুল আমিন (পিতা গোলজার আহম্মদ)। নুরু মিয়া মুন্সীর বাড়িতে শহীদদের গণকবর রয়েছে। তবে গণকবরটি এখনো অসংরক্ষিত অবস্থায় আছে। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!