মুক্তিযুদ্ধে রোয়াংছড়ি উপজেলা (বান্দরবান)
রোয়াংছড়ি উপজেলা (বান্দরবান) গভীর বন ও পর্বত বেষ্টিত একটি এলাকা। এখানে চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা ইত্যাদি ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর মানুষ ছাড়াও বাঙালি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এ উপজেলার উত্তরে রাজস্থালী ও বিলাইছড়ি, দক্ষিণে রুমা, পূর্বে বিলাইছড়ি ও রুমা এবং পশ্চিমে বান্দরবান সদর উপজেলা। ১৯৭১ সালে রোয়াংছড়ি বান্দরবান সদর থানার অন্তর্ভুক্ত একটি এলাকা ছিল। ১৯৭৬ সালে রোয়াংছড়ি থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এ উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন। সেগুলো হলো- আলিখং, তড়ছা, নোয়াপাতং এবং রোয়াংছড়ি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর পার্বত্য জেলা বান্দরবানের (তৎকালীন বান্দরবান মহকুমা) রোয়াংছড়ির জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ৭ই মার্চের পর এখানে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন নেপাল কান্তি দাশ, গিরিচরণ তনচংগ্যা, আমাহন চন্দ্ৰ তনচংগ্যা, ডা. বাদল দাশগুপ্ত, মো. সফিকুর রহমান, গৌরাঙ্গ সেন, দুলাল সেন, আবদুস ছালাম, সুবল মুহুরি, সত্যেন্দ্র মজুমদার, শামসুল ইসলাম, সাধন দাশ, মৃদুল সরকার, আক্কেল আলী, দুলাল কর্মকার, খোকা কর্মকার, দুলাল শীল প্রমুখ। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। ১৪ই এপ্রিল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বান্দরবান-রোয়াংছড়িতে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সামগ্রিক সাংগঠনিক কাজে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা হলেন- নেপাল কান্তি দাশ (রোয়াংছড়ি), মো. সফিকুর রহমান, বাদল দাশগুপ্ত (রোয়াংছড়ি), গৌরাঙ্গ সেন (রোয়াংছড়ি), লক্ষ্মণ তনচংগ্যা (বটতলী, রোয়াংছড়ি), গিরিচরণ তনচংগ্যা (বটতলী রোয়াংছড়ি), আমাহন চন্দ্ৰ তনচংগ্যা (বটতলী, রোয়াংছড়ি), আবদুস সালাম (বান্দরবান সদর), সত্যেন্দ্র মজুমদার (মধ্যমপাড়া, বান্দরবান), সুবল মুহুরী (বান্দরবান সদর), চিন্তা বিশ্বাস (বান্দরবান সদর), শামসুল আলম (সুয়ালক, বান্দরবান), সাধন দাশ (বান্দরবান সদর), মৃদুল সরকার (বান্দরবান সদর), আবদুল ছবুর (বালাঘাটা, বান্দরবান), আক্কেল আলী (বান্দরবন সদর), শামসুল ইসলাম (রোয়াংছড়ি) প্রমুখ। এ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে ভারতের দেমাগ্রীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখানে অন্যদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর তারার ও ধর্মপাল প্রশিক্ষক ছিলেন। ত্রিপুরার মেলাগড়েও রোয়াংছড়ির কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে নভেম্বর মাসে ধোয়াছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোখলেছুর রহমান ও কমান্ডার সুবাদার আমির হোসেন। এ ক্যাম্প থেকে ডা. বাদল দাশগুপ্ত, মো. সফিকুর রহমান, ডা. সন্তোষ রঞ্জন দাশ, নেপাল দাশ, গৌরাঙ্গ সেন, সুরেশ দাশ, দুলাল সেন, সুভাষ বড়ুয়া, আলী আহমদ, আবদুল মোনাফ, চিত্তরঞ্জন মল্লিক, সুকুমার দাশ প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
রোয়াংছড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন উপায়ে বেরিকেড সৃষ্টি করে পাকবাহিনীকে প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বান্দরবান শহরেও মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধভাবে পাকহানাদার বাহিনীকে মোকাবেলার উদ্যোগ নেন। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। প্রাথমিক প্রতিরোধে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন তাঁরা হলেন- ডা. বাদল দাশ গুপ্ত (রোয়াংছড়ি), গৌরাঙ্গ সেন (বটতলী), মো. সফিকুর রহমান (বান্দরবান সদর), লক্ষ্মণ তনচংগ্যা (বটতলী), গিরিচান তনচংগ্যা (বটতলী), আমাহন চন্দ্ৰ তনচংগ্যা (বটতলী), আব্দুস সালাম, সত্যেন্দ্র মজুমদার (মধ্যমপাড়া, বান্দরবান), সুবল মুহুরি (বান্দরবান সদর), শামসুল ইসলাম (সুয়ালক), আবদুল ছবুর (বান্দরবান সদর), সাধন দাশ (বান্দরবান সদর), মৃদুল সরকার (রোয়াংছড়ি), আক্কেল আলী (আর্মিপাড়া, বান্দরবান), শামসুল ইসলাম (রোয়াংছড়ি), দুলাল কর্মকার (রোয়াংছড়ি), খোকা কর্মকার (রোয়াংছড়ি), দুলাল শীল (রোয়াংছড়ি), সুনীল শীল (বটতলী), মিলন সূত্র ধর (বটতলী), হারাধন রুদ্র (আলেক্ষ্যং), সুখেন্দু কর্মকার (আলেক্ষ্যং), সন্তোষ শীল (আলেক্ষ্যং), চন্দন দে (নোয়াপতন), স্বপন কর্মকার (নোয়াপতন), রতন কর্মকার (নোয়াপতন), লিটন দাশ (নোয়াপতন), সুভাষ দাশ (রোয়াংছড়ি), ছোটন দাশ (রোয়াংছড়ি), দিলীপ দাশ (রোয়াংছড়ি), স্বপন বৈদ্য (রোয়াংছড়ি), আশিস চক্রবর্তী (রোয়াংছড়ি), মোখলেছুর রহমান (বান্দরবান সদর), সুবাদার আমির হোসেন (বান্দরবান সদর), আব্দুল ওহাব (বান্দরবান সদর), প্রতি ত্রিপুরা (বান্দরবান সদর), সুকুমার দাশ (বান্দরবান সদর), সত্য মল্লিক (বান্দরবান সদর), চিত্ত মল্লিক (বান্দরবান সদর), আলী আহামদ (বান্দরবান সদর), আবদুল মোনাফ (বান্দরবান সদর), সুভাষ বড়ুয়া (বান্দরবান সদর), সাধন বড়ুয়া (বান্দরবান সদর), ডা. সন্তোষ রঞ্জন দাশ (মধ্যমপাড়া, বান্দরবান), সুরেশ চন্দ্র দাশ (নিউ গুলশান, বান্দরবান), পুলুপ্রু মারমা (বান্দরবান সদর), প্রিয়তোষ ধর (বান্দরবান সদর), জয়নাল উদ্দিন (বান্দরবান সদর), তপন দাশ (বান্দরবান সদর), মো. আবুল কাশেম (বান্দরবান সদর), শামসুল ইসলাম (থানছি), নেপাল দাশ (আলেক্ষ্যং), উদয়সেন তনচংগ্যা (সুয়ালক), মনোরঞ্জন বড়ুয়া (কুহালং), মাহাবুবুর রহমান (বান্দরবান সদর), লিয়ন পুন বম (বান্দরবান সদর), মো. সোলায়মান (বান্দরবান সদর) প্রমুখ। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের পাকবাহিনীকে প্রতিরোধের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
১৫ই এপ্রিল পাকবাহিনী বান্দরবান সদর ও রোয়াংছড়িতে অনুপ্রবেশ করে। রোয়াংছড়ি এলাকায় তারা কোনো ক্যাম্প স্থাপন করেনি। বান্দরবান সদর থানার অন্য এলাকায় তাদের ক্যাম্প ছিল। রোয়াংছড়ির বিভিন্ন জায়গায় রাজাকারদের ঘাঁটি ছিল।
রোয়াংছড়িতে যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন সুবেদার মেজর তাহের মোহাম্মদ আলী ওরফে টি এম আলী (সাবেক সেনাসদস্য, শুরমান ঘাঁটি, যশোর; অবাঙালি, তবে তাঁর স্ত্রী ছিলেন বাঙালি)। ধোয়াছড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন সুবাদার আমির হোসেন। ক্যাজরপাড়া ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন মো. ইদ্রিছ মোল্লা।
২০শে জুন বান্দরবানে পাকবাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটি গঠিত হয়। বান্দরবন মহকুমা শান্তি কমিটি দ্বারা বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানছি থানা এলাকার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। যাদের নিয়ে এই শান্তি কমিটি গঠিত হয় তারা হলো- বোমাং সার্কেলের রাজা অং শৈ প্রু চৌধুরী, টি কে (বান্দরবান সদর), মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী (বান্দরবান সদর), টুন ন্যু প্রু (বান্দরবান সদর), এ আর মাস্টার (বান্দরবান সদর), এ হোসাইন সওদাগর (বান্দরবান সদর), কবির আহমদ সওদাগর (বান্দরবান সদর), সাইরি টুইন প্রু (বান্দরবান সদর), আবদুস ছালাম সওদাগর (বান্দরবান সদর), এম এস প্রু (বান্দরবান সদর), চাইলো প্রু (বান্দরবান সদর), বজলুর রশিদ (বান্দরবান সদর), সা চিং প্রু (বান্দরবান সদর), হারুনুর রশিদ (বান্দরবান সদর), মো. আয়ুব চৌধুরী (বান্দরবান সদর), খাইও চুয়ে প্রু (বান্দরবান সদর), থোয়াই শে জও (বান্দরবান সদর), মং চিং প্রু (বান্দরবান সদর), শোয়ে প্রু (চেয়ারম্যান ইউপি, বান্দরবান সদর), উ শে মং (বান্দরবান সদর), ক্যা চিং প্রু (বান্দরবান সদর), ম্রা শ থোয়েন (বান্দরবান সদর), চন্দ্র কুমার সারকি (বান্দরবান সদর), থোয়েন ন্যু মং (বান্দরবান সদর), হাফেজুর রহমান চৌধুরী (বান্দরবান সদর), জামাল উদ্দিন প্রমুখ। শান্তি কমিটির পর বান্দরবানে পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীও গঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, অং শৈ প্রু চৌধুরী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। সে ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান-এর মন্ত্রিসভায় খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ছিল।
রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করত। তারা পাকবাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ-খবর দিত। স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীরা নারীদের নির্যাতন- নিপীড়ন করতে পাকবাহিনীকে প্ররোচিত করত। তাদের দ্বারা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় হত্যা, লুণ্ঠন ও নারীনির্যাতন সংঘটিত হয়।
যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকবাহিনী রোয়াংছড়ি-বান্দরবানের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করতে থাকে। নারীরাও তাদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। সাধারণ মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়। অনেক মানুষের বাড়ি-ঘর তারা জ্বালিয়ে দেয়। শিশুরাও নির্যাতনের শিকার হয়। এখানকার অনেক সংখ্যালঘু পরিবার পাকবাহিনী ও রাজাকারদের অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে ভারতে যেতে বাধ্য হয়। ভারতের দেমাগ্রী যাওয়ার পথেও অনেক শরণার্থী পাকবাহিনীর নির্যাতনের কবলে পড়েন।
রোয়াংছড়িতে পাকবাহিনীর কোনো নির্যাতনকেন্দ্র বা বন্দিশিবির ছিল না। তবে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের বান্দরবান সদর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে স্থাপিত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করত। এসব কেন্দ্রে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠুর নির্যাতন শেষে নৃশংসভাবে হত্যা করত।
রোয়াংছড়িতে কোনো বধ্যভূমি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে এ উপজেলার নোয়াপতনে শহীদ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। রোয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আরও সমাধি বা একাধিক বধ্যভূমি থাকা স্বাভাবিক।
এ অঞ্চলের বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা দল বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। যেমন- ইদ্রিছ মোল্লা বাহিনী, শামসু কমান্ডারের বাহিনী, সফিক কমান্ডারের বাহিনী, সুবাদার আমির হোসেন বাহিনী ইত্যাদি।
ভারতের দেমাগ্রীতে প্রশিক্ষণ শেষে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা সাঙ্গু নদীপথে রুমা-থানছি হয়ে রোয়াংছড়ির ধোয়াছড়িতে আসেন। নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান ও কমান্ডার সুবাদার আমির হোসেন ধোয়াছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে রোয়াংছড়ির ধোয়াছড়ি, বান্দরবানের চেরাংঘাটা, উদালবনিয়া, রুমা, চট্টগ্রামের পটিয়া, রাঙ্গুনিয়ার শিলক ইত্যাদি এলাকায় পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন কমান্ডার আমির হোসেন ও মোখলেছুর রহমান। তাঁদের সঙ্গে যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন তাঁরা হলেন- সাধন দাশ, আবদুল ওহাব, ভুবন ভট্টাচার্য, সত্যরঞ্জন মজুমদার, প্রতি ত্রিপুরা, দুলাল সেন, সুরেশ দাশ, চিত্তরঞ্জন মল্লিক, সুকুমার দাশ, আলী আহমদ, ডা. সন্তোষ রঞ্জন দাশ এবং ৩ জন সেনা সদস্য। নোয়াপতনের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সাঙ্গু নদীতে নভেম্বর মাসের মাসের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকহানাদার বাহিনীর একটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। বাঘমারায় ১৪ই ডিসেম্বর ভোর ৫টায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। ৪-ঘণ্টা ধরে চলা এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন সুবেদার মেজর টি এম আলী। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কমান্ডার টি এম আলী এ যুদ্ধে শহীদ হন। এ উপজেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কুড়িগ্রামের রৌমারি থানা অপারেশন, সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহ নকশি বিওপি অপারেশন, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শত্রুমুক্ত করার যুদ্ধ ইত্যাদিতে অংশ নেন। ১৪ই ডিসেম্বর রোয়াংছড়ি উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
রোয়াংছড়িতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- উদয় সেন তনচংগ্যা (নভেম্বরে বান্দরবানের সুয়ালক এলাকায় শহীদ, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুর বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন), টি এম আলী (বাঘমারা যুদ্ধে শহীদ) এবং সেনাবাহিনীর ৩ জন সদস্য (নোয়াপতনে শহীদ)। রোয়াংছড়ির নোয়াপতনে শহীদ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। বাঘমারায় শহীদ টি এম আলীর স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। [অনির্বাণ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড