You dont have javascript enabled! Please enable it! রৌমারী প্রথম বিচারিক আদালত, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন (রৌমারী, কুড়িগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

রৌমারী প্রথম বিচারিক আদালত, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন (রৌমারী, কুড়িগ্রাম)

রৌমারী প্রথম বিচারিক আদালত, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন (রৌমারী, কুড়িগ্রাম) কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার মুক্তাঞ্চলে বাংলাদেশের প্রথম বিচারিক আদালত, ক্যান্টনমেন্ট ও সিভিল প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম আদালত স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে এবং এ আদেশ কার্যকর হয়। এ মুক্তাঞ্চল মুজিবনগর সরকার-এর উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম- ও অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী পরিদর্শন করেন।
লে. এস আই এম নুরুন্নবী খান জুলাইয়ের শেষদিকে রৌমারী মুক্তাঞ্চলের দায়িত্ব নিয়ে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে গতি আনেন। রৌমারীতে আগস্টের প্রথম থেকে বেসামরিক প্রশাসন চালু হয়। সেখানে প্রশাসনিক কাজ করার জন্য একটি নগর কমিটি গড়ে তোলা হয়। আজিজুল হক (রৌমারী সি জি জামান স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ন্যাপ মোজাফ্ফর নেতা)-কে সভাপতি, নূরল ইসলাম সরকার (সভাপতি, রৌমারী আওয়ামী লীগ)-কে সহ-সভাপতি ও নওশের আলী আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। সি জি জামান স্কুল প্রাঙ্গণে ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলা হয়। পাশে অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ১১ই আগস্ট ভারতীয় জেনারেল গুল বক্স সিংগিলকে এসব স্থাপনা দেখানো হয়। তাঁর পরিদর্শনকালে স্কুল মাঠে প্রায় ১০ হাজার যুবক সমবেত হয়। তারা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দাবি করে। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত দাবিতে জেনারেল গুল বক্স সিংগিল খুবই খুশি হন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এরপর রৌমারীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্রের যোগান বৃদ্ধি করে।
সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ১২ই আগস্ট রৌমারীতে বিচারিক আদালত চালু করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে আদালত কাজ শুরু করে। মুজিবনগর সরকারের অধীনে এটি ছিল প্রথম আদালত। এ আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের অপরাধের বিচার করা হতো। বিচারাধীন এলাকা ছিল সমগ্র মুক্তাঞ্চল। এ মুক্তাঞ্চলের মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলার বৃহৎ এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। জুড়ি পদ্ধতিতে একাধিক বিচারক নিয়ে বিচার কার্য চলত। নিয়মিত আদালতের মতো এখানে কয়েকজন আইনজীবী পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও জেলা ন্যাপ-এর সভাপতি এডভোকেট আজিজুল হক সেলিম, কুড়িগ্রামের মাহফুজুল হক, গাইবান্ধার এডভোকেট ফজলে রাব্বী (বর্তমানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার) প্রমুখ আইনজীবীর ভূমিকা পালন করেন। এ আদালত আছাদুল্লাহ ওরফে ছোট ফক্কু নামে একজনকে পাকিস্তানের পক্ষে দালালির জন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে। আদালতের আদেশে দালাল ফক্কু মিয়ার মৃত্যুদণ্ড ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকর করা হয়। এছাড়া এ আদালতে রৌমারীর ওসি আবুল হোসেন, চেয়ারম্যান সামছুল হুদা, মওলানা আব্দুর রাজ্জাক (মণ্ডলপাড়া), সুফি ফহিমউদ্দিন মুন্সী (নটানপাড়া), লুৎফর রহমান (রৌমারী পাড়া), আব্দুস সবুর (রৌমারী), জাফর আলী (টালুয়ার চর), ফান্দু হাজী (মণ্ডলপাড়া)-র বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিচার কার্য শুরু হয়। এদের মধ্যে ওসি আবুল হোসেন ও ফহিমউদ্দিনকে ভারতীয় কারাগারে পাঠানো হলেও অন্যদের রৌমারীতেই আটক রাখা হয়।
একই সময়ে স্কুল, ডাকঘর, রাজস্ব, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ও পুলিশি কার্যক্রম চালু করা হয়। দেশের অভ্যন্তরে প্রথম ক্যান্টনমেন্ট রৌমারীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্যান্টনমেন্ট কথাটি সাইনবোর্ডে লিখে রৌমারী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সামনে টানিয়ে দেয়া হয়। এসব বিচারিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং স্থাপনার খবর বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রৌমারী পরিদর্শনকালে বেসামরিক প্রশাসনের কার্যক্রম তদারকি করেন। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড