You dont have javascript enabled! Please enable it!

লক্ষ্মীপুর গণহত্যা (ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ)

লক্ষ্মীপুর গণহত্যা (ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ১৩ই জুলাই। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৬ জন নিরীহ মানুষ এতে শহীদ হন।
ময়মনসিংহ সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে ফুলবাড়িয়া উপজেলার অবস্থান। আর ফুলবাড়িয়া থেকে লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব প্রায় ৫ কিমি। সারা বাংলাদেশের মতো ফুলবাড়িয়াতেও স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনীর নির্মমতার শিকার হয় এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল ফুলবাড়িয়া অঞ্চল। মূলত এপ্রিল থেকেই ফুলবাড়িয়ায় অসংগঠিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং, অস্ত্র সংগ্রহ প্রভৃতির কাজ চলতে থাকে। মে মাসের পূর্ব পর্যন্ত ফুলবাড়িয়া থানায় মুক্তিবাহিনী তেমন কোনো সংগঠিত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর ফুলবাড়িয়ার ভবানীচর ইউনিয়নে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ১৩ই জুলাই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি দল গাড়িযোগে ফুলবাড়িয়া থানা এলাকায় টহলে আসে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ছিল ফুলবাড়িয়া থেকে ৪ কিমি পূর্বে কাটাখালী নামক গ্রামে। সকাল ৮টায় বেবি টেক্সিচালক আজগর আলীর মাধ্যমে পাকবাহিনীর আগমনের সংবাদ জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ধীরে- ধীরে এলাকার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ওদিকে বর্বর পাকবাহিনী ফুলবাড়িয়া সদরে তাদের ক্যাম্প ও টর্চার সেল গড়ে তোলে। যুদ্ধকালীন অনেক ঘটনার মধ্যে লক্ষ্মীপুর গণহত্যা হচ্ছে ফুলবাড়িয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৩ই জুলাই লক্ষ্মীপুর বাজারে তা সংঘটিত হয়। এখানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৬ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। স্কুলের পুকুর পাড়ে আরো কয়েকজনকে ধরে এনে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা। লক্ষ্মীপুর যুদ্ধের পর দেওখলা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৭০০ বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। লক্ষ্মীপুর গণহত্যার শিকার ৮ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আব্দুল কাদের (পিতা হাসুন আলী মৈশাল), আব্দুল রহমান (পিতা হাসুন আলী মৈশাল), ইলিয়াস আহম্মেদ (পিতা ইমান আলী মৈশাল), আবু তাহের (পিতা মো. ইমান আলী মৈশাল), কারি মো. আবু নাছের, মৌলভী আবু তাহের মাস্টার (পিতা মৌলানা আব্বাস আলী, লক্ষ্মীপুর), মনতাজ আলী মণ্ডল (পিতা রেদুত আলী মণ্ডল, তেলিগাতী) ও জৈনদ্দিন সরকার (লক্ষ্মীপুর)। নিহতদের মধ্যে ৪ জনকে লক্ষ্মীপুর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরপাড়ে সমাহিত করা হয়। অন্যদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। লক্ষ্মীপুর গণহত্যায় শহীদদের প্রতিবছর স্মরণ করা হয়। [শফিকুল ইসলাম কাদির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!