You dont have javascript enabled! Please enable it!

রূপগঞ্জ যুদ্ধ (নড়াইল সদর)

রূপগঞ্জ যুদ্ধ (নড়াইল সদর) সংঘটিত হয় ৯ ও ১০ই ডিসেম্বর দুদিন। নড়াইল জেলা শহরের রূপগঞ্জ এলাকায় সংঘটিত রাজাকার ও পাকবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নড়াইল শত্রুমুক্ত হয়। রূপগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ওয়াপদা ডাকবাংলোয় (বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ড) পাকিস্তানি মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর সবচেয়ে বড় ক্যাম্প ছিল। জুন মাসে তারা এখানে অবস্থান নেয়। এছাড়া রূপগঞ্জ পুলি ফাঁড়িতেও কিছু মিলিশিয়া, পুলিশ ও রাজাকার অবস্থান করত।
৮ই ডিসেম্বর নড়াইল মহকুমার লোহাগড়া থানা শত্রুমুক্ত হয় এবং কালিয়া থানার মুক্তি ছিল দ্বারপ্রান্তে। এমতাবস্থায় লোহাগড়া, খড়রিয়া (কালিয়া) ও নড়াইল সদরের মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলকে শত্রুমুক্ত করার ঘোষণা দেন এবং এ উদ্দেশ্যে শহরকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এর আগে ৭ই ডিসেম্বর রাজাকারদের কূটকৌশলে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। পরে পুলিশ ও রাজাকাররা অমানুষিক নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করে মৃতদেহ নিয়ে নড়াইল শহর প্রদক্ষিণ করে। এ কারণেও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলকে শত্রুমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।
৯ই ডিসেম্বর দুপুরে রূপগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থানরত পাকিস্তানি রিজার্ভ ফোর্স, পুলিশ ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বন্দুক যুদ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা পরাস্ত হয়। কিন্তু নড়াইল সদরের বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হন। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা আরো সংগঠিত হয়ে শহরকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলেন এবং হানাদারদের রূপগঞ্জ ক্যাম্প আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। এদিন সন্ধ্যার পর থেকে লোহাগড়া থানার মুক্তিযোদ্ধরা নড়াইল শহরের কোলঘেঁষা চিত্রা নদীর পূর্বপাড়ে সীমাখালি, পংকবিলা ও বোড়াবাদুরিয়া গ্রামে এসে পজিশন নেন। রাতে খড়রিয়া ক্যাম্প ও সদর উপজেলার দেড়শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা রূপগঞ্জ উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিক থেকে ক্যাম্প ঘেরাও করে ফেলেন। ভোর ৪টার দিকে রূপগঞ্জ জামে মসজিদ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমির হোসেন ও সাখাওয়াত হোসেন রানার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ, বর্তমান উৎসব কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাঈদুর রহমান সেলিম, জিন্দার আলী খান ও মো. কুবাদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং ব্যবসায়ী মালেক মোল্লার দোতলায় সদর উপজেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার শরীফ হুমায়ুন কবির, হালি মুন্সি, সাইফুর রহমান হিলু ও শেখ আজিবর রহমানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সম্মিলিতভাবে এসব স্থান থেকে হানাদারদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। ১০ই ডিসেম্বর সকালে পাকবাহিনীর দুজন সেন্ট্রি গুরুতর আহত হলে হানাদাররা ভীত হয়ে পড়ে। এ- সময় মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবির ও সাঈদুর রহমান সেলিমসহ অনেকে মাইকযোগে পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। আত্মসমর্পণ করলে তাদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মানা হবে বলে আশ্বাস দিলে সকাল ১১টার দিকে রূপগঞ্জ বাজারের আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া, সালামুদ্দাহার প্রমুখের মধ্যস্থতায় পাক অধিনায়ক বেলুচ কালা খান ২২ জন পাকসেনা, ৪৫ জন রাজাকার এবং বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। ফলে নড়াইল শত্রুমুক্ত হয়। রূপগঞ্জের এ-যুদ্ধে দুজন পাকসেনা নিহত হয়। [শামীমূল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!