রূপসা যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর)
রূপসা যুদ্ধ (ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ৩১শে আগস্ট। এতে ৫ জন পাকসৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়।
ঘটনার দিন রাতে জহিরুল হক পাঠান খবর পান যে, পাকবাহিনী রামগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ থেকে রূপসার পথে যাবে। তাই তিনি রামগঞ্জ, গল্লাক ও খাজুরিয়ায় ডিফেন্স বসান, আর হাবিলদার রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযাদ্ধাদের দুটি গ্রুপ রূপসা বাজারে পজিশনে রাখেন। হাবিলদার রশিদ হারেছ ওস্তাদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ গঙ্গাজলি ব্রিজের উভয় পাশে এবং নিজে একটি গ্রুপ নিয়ে ডান পাশে দেওয়ানজী বাড়ির কোনায় (চৌধুরী বাড়ি) ডিফেন্স নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের আমিনুল হক মাস্টারসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। হঠাৎ খবর আসে, পাকবাহিনী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে রূপসার কাছাকাছি এসে গেছে এবং অনবরত ৩ ইঞ্চি মর্টারের শেলিং ও ফাকা গুলি করছে। পাকবাহিনী দিঘির পশ্চিম পাড়ে এসে পূর্বমুখি হয়ে গুলি করছে, আর রাজাকাররা বাজারে ঢুকে দোকানের তালা ভেঙ্গে মালপত্র লুট করছে। পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ করেন। হঠাৎ আক্রমণে রাজাকাররা গুলি খেয়ে দিঘিতে লাফিয়ে পড়ে। ৫ মিনিট পর ডান দিক থেকে হাবিলদার রশিদ ও তাঁর সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে প্রায় ৪ ঘণ্টা প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। এক পর্যায়ে গঙ্গাজলি ব্রিজের রেলিংএ দাঁড়ানো মুক্তিযোদ্ধা হারেছের কপালে একটি গুলি লাগে। তিনি তখন এলএমজি থেকে গুলি করছিলেন। এ খবর শোনার পর নায়েক বাসার, কমান্ডো গফুর ও অন্যরা ক্রলিং করে দিঘিতে নেমে কাঁধে এলএমজি নিয়ে প্রচণ্ডভাবে গুলি করে এগিয়ে যান। গোলাগুলির ভেতর জহিরুল হক পাঠান ও কলিমউল্যা ভূঁইয়া এসে পড়েন। রক্তক্ষরণ অবস্থায় হারেছের মাথায় গামছা দিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়। এদিকে পাকবাহিনী রাজাকারদের রেখে রূপসার রশিদ চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা আমিন মিয়া চৌধুরী (নান্নু মিয়া)-কে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকাররা গ্রামের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় বাজার থেকে জনগণ স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে আসে। তারা ২০০ রাউন্ড গুলি ও একটি চাইনিজ রাইফেল কুড়িয়ে পায়। যুদ্ধে ৪-৫ জন পাকসৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে আমিন মিয়া চৌধুরীকে ছাড়িয়ে আনতে হাজার-হাজার জনতা রাইফেল, বন্দুক উপেক্ষা করে ফরিদগঞ্জ অভিমুখে মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পাকবাহিনী তাঁকে ছেড়ে দেয়। [দেলোয়ার হোসেন খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড