You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক রেজাউল করিম মানিক

রেজাউল করিম মানিক, বীর প্রতীক (১৯৪৭-১৯৭১) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মানিকগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এক সময় তাঁরা ঢাকার মগবাজারের হাসনাবাদ কলোনিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ই জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ওয়াজেদ আলী এবং মাতার নাম রাজিয়া বেগম। ঢাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে বিএ (অনার্স) শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তিনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য অকুতোভয় রেজাউল করিম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
পাকিস্তানি হানাদাররা ২৫শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে রেজাউল করিম মানিক বন্ধুদের সঙ্গে প্রথমে নরসিংদীতে যান। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের উদ্যোগে নরসিংদীতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হলে রেজাউল করিম তাতে যুক্ত হন। এখানকার ছাত্র-তরুণদের প্রশিক্ষণের খবর পেয়ে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। খালেদ মোশাররফ তাঁদের নিজের সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। নরসিংদীতে বেশকিছুদিন প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তাঁরা গেরিলা দলের সদস্য হিসেবে ২ নম্বর সেক্টরে আবার প্রশিক্ষণ নেন। রেজাউল করিম মানিক ও তাঁর সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের ছাত্র-তরুণ হওয়ায় তাঁদের ঢাকা শহরে গেরিলা অপারেশন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তাঁদের নিয়ে ঢাকা (উত্তর) গেরিলা দল গঠিত হয়। এ দলের সদস্যরা ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশকিছু সফল অপারেশন পরিচালনা করেন।
সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে রেজাউল করিম মানিক ও তাঁদের দলের সদস্যরা ১৪ই নভেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার ধামরাই থানাভুক্ত ঢাকা-আরিচা সড়কের ভায়াডুবি সেতু ধ্বংস করার অপারেশনে অংশ নেন। ঢাকা-আরিচার প্রধান সড়কের ওপর এ সেতু ছিল বলে পাকিস্তানি সেনারা সব সময় তাতে পাহারা দিত। মুক্তিযোদ্ধারা রাতে সেতুর কাছে গেলে পাকসেনাদের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে কয়েকজন হানাদার সৈন্য নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় রেজাউল করিম মানিক ও অন্যরা যখন সেতুতে বিস্ফোরক স্থাপন করছিলেন, তখন সড়কপথে এসে একদল পাকিস্তানি সেনা তাঁদের আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ চলার সময় রেজাউল করিম মানিক ও তাঁর সহযোদ্ধারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেতুটি ধ্বংস করেন। এরপর তিনি হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। এক সময় পাকিস্তানিদের নিক্ষিপ্ত মর্টারের স্প্লিন্টারের আঘাতে রেজাউল করিম মানিক ঘটনাস্থলে শহীদ হন। তিনি শহীদ হলেও হানাদার সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ আক্রমণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। শহীদ রেজাউল করিম মানিকের মরদেহ ঢাকায় এনে আজিমপুর কবর স্থানে দাফন করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার রেজাউল করিম মানিককে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলায়ের স্মৃতি চিরন্তন-এ রেজাউল করিম মানিকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নয়াপল্টন থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ মানিকের নামে করা হয়েছে। আজিমপুরে তাঁর নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ২০১৬ সালে শহীদ রেজাউল করিম মানিক বীর প্রতীক স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!