You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী রেফাজ কোম্পানি (মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ)

রেফাজ কোম্পানি (মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ) স্থানীয় একটি মুক্তিবাহিনী। এর প্রধান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রফিজ উদ্দিন রেফাজ।
কিশোরগঞ্জ মহকুমা (পরবর্তীতে জেলা) ব্যতীত বৃহত্তর ময়মনসিংহ (পরবর্তীতে শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলা) ও টাঙ্গাইল জেলা ১১নং সেক্টারের অধীনে ছিল। সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্স ছিল মহেন্দ্রগঞ্জে। এসব অঞ্চলের অধিকাংশ ছাত্র-যুবক ভারতের মেঘালয় প্রদেশের তুরা ট্রেনিং সেন্টার থেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ট্রেনিং শেষে তাঁদের বিভিন্ন কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাভূত করার জন্য অস্ত্র ও গোলাবরুদসহ দেশের অভ্যন্তরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। ১০০ থেকে ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত হতো একেকটি কোম্পানি। এসব কোম্পানি সাধারণত কমান্ডারের নামেই সমধিক পরিচিত ছিল। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার বনবাংলা গ্রামের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রফিজ উদ্দিন রেফাজকে কোম্পানি কমান্ডার করে ১০০ মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোম্পানিটি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তা রেফাজ কোম্পানি নামে পরিচিত।
রেফাজ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা তন্তর যুদ্ধ (২৩শে অক্টোবর, নালিতাবাড়ি, শেরপুর), ভিটিবাড়ি যুদ্ধ- (২৭শে অক্টোবর, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ), মুক্তাগাছা থানা আক্রমণ (২৯শে অক্টোবর, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ), বটতলা বাজার মিলিশিয়া ক্যাম্প আক্রমণ (১১ই নভেম্বর, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ), রাঙামাটিয়া যুদ্ধ (২৯শে নভেম্বর, ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ) প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করে।
রেফাজ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁদের নাম জানা যায়, তাঁরা হলেন— রফিজ উদ্দিন রেফাজ (কোম্পানি কমান্ডার, বনবাংলা, মুক্তাগাছা), হাবিবুর রহমান (রেফাজ কোম্পানির টুআইসি, বনবাংলা, মুক্তাগাছা), শহীদ আবদুস সাত্তার (পিতা আবেদ আলী সরকার, ঝনকাবাজারা মুক্তাগাছা), শহীদ মনির উদ্দিন (পিতা নজর আলী মণ্ডল, ঘাটুরী পূর্বপাড়া, মুক্তাগাছা), শহীদ ওয়াহেদ আলী (পিতা গণেশ উদ্দিন মিয়া, শিমলা, মুক্তাগাছা), শহীদ নজরুল ইসলাম (পিতা আবদুর রহমান আকন্দ, নন্দীবাড়ী, ময়মনসিংহ), শহীদ বাবর আলী (পিতা ফরমান আলী, নন্দীবাড়ী, মুক্তাগাছা), শহীদ মকবুল হোসেন (পিতা বাহাজ উদ্দিন মণ্ডল, কাঠবওলা, মুক্তাগাছা), শহীদ হাছেন আলী (পিতা মোসলেম উদ্দিন, রায়থোরা, মুক্তাগাছা), শহীদ হযরত আলী (পিতা মাসুদ আলী রায়থোরা, মুক্তাগাছা), শহীদ আজগর আলী (পিতা জবেদ আলী, নন্দীবাড়ী, মুক্তাগাছা), শহীদ মেহের আলী (পিতা নবু শেখ, ঘাটুরী, মুক্তাগাছা), সুভাস চন্দ্র রক্ষিত (মুজাটি), মফিজুল ইসলাম খোকা (তারাটি চন্দবাড়ী), আবদুল হাই আকন্দ (তারাটি), রফিকুল ইসলাম বাবুল (ঈশ্বরগ্রাম), মাহফুজুল ইসলাম খান ওরফে সেলিম (মোগলটুলা), জাহান আলী (তারাকান্দি), এ বি সিদ্দিক (কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ), আবদুল আজিজ (তারাটি), মোসলেম উদ্দিন (যাত্রাটি), ওয়াজ উদ্দিন (নন্দীবাড়ী), রহমান আলী (পাড়াটঙ্গী), আবদুল কাদের (নন্দীবাড়ী), মহিউদ্দিন (বাসাটি), মহিয়ার রহমান মতি (তারাটি), রজব আলী (দাওগাঁও), শামসুল ইসলাম (মোগলটুলা), নরেন্দ্র চন্দ্র কর (গোবিন্দপুর), আবদুল কাদের (জয়দা), তাজউদ্দিন তাজু (মানকোন), আশরাফ আলী, জুলহাস উদ্দিন, ইবরাহীম হোসেন প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রেফাজ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহের খাকডহর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে অস্ত্র জমা দেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!