রায়পাড়া গণহত্যা (খানসামা, দিনাজপুর)
রায়পাড়া গণহত্যা (খানসামা, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় মে মাসে। এতে ১৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের ৯ জনের পরিচয় জানা গেছে।
খানসামা থানার আলোকঝারি ইউনিয়নের রায়পাড়া অনেকটা জঙ্গলাকীর্ণ ও বাঁশবাগানের ছায়ায় ঢাকা ছিল। এর উত্তরে বয়জউদ্দিনপাড়া, দক্ষিণে শুকুরুপাড়া, পূর্বে কুমারপাড়া ও টংগুয়া, পশ্চিমে তহশীলদার পাড়া ও হঠাৎপাড়ার অবস্থান। এসব পাড়ায় তখন ব্যাপক বাঁশবাগান থাকায় এক ধরনের ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করত। রায়পাড়ার এক পুকুরের কাছে গণহত্যা সংঘটিত হয়।
রায়পাড়া হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম। এর চতুর্দিকের শুকুরুপাড়া, কুমারপাড়া, টংগুয়া, তহশীলদারপাড়া ও হঠাৎপাড়ায় মুসলমানদের বসবাস ছিল। যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত সাধারণ হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু রাজাকারের কারণে এখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। জামায়াত ও মুসলিম লীগ এর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রাজাকারদের সহায়তায় এ গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা হিন্দুদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত করে।
রায়পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা দরিদ্র ছিল। মাটির দেয়াল ও চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি ছিল। তাদের প্রায় সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। গণহত্যার দিন সকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকারদের একটি বিশাল দল নিয়ে রায়পাড়ায় আক্রমণ করে। তারা প্রথমে পুরো গ্রামে লুটপাট, নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং প্রায় সব বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর গ্রামের অনেক নিরীহ মানুষকে ধরে যোগেশ্বর রায়ের বাড়ি সংলগ্ন পুকুরপাড়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালায়। এতে ১৪ জন প্রাণ হারায়। গণহত্যায় নিহতদের ৯ জনের পরিচয় জানা যায়। তারা হলেন- মুরালি মোহন রায় (পিতা শশি মোহন রায়), মহিরাম রায় (পিতা তারকনাথ রায়), যোগেশ্বর রায় (পিতা টুনিরাম রায়), অলঙ্গরাম রায় (পিতা মাধব চন্দ্র রায়), ছত্ররাম রায় (পিতা অঙ্গুরাম রায়), চেপারাম রায়, ছত্ররাম রায় (পিতা অঙ্গুরাম রায়), মলিন চন্দ্র রায় (পিতা খর্গেশ্বর রায়) ও খর্গরাম রায় (পিতা মহেন্দ্ৰনাথ রায়)। এদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন বৈশাগু রাম রায়, বিপিন চন্দ্র রায় (পিতা বিশাগু), গুটিয়া রাম রায় ও দুঃখিয়া রাম রায়। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড