You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে রামু উপজেলা (কক্সবাজার)

রামু উপজেলা (কক্সবাজার) রামু উপজেলা বাংলাদেশের এক প্রান্তে অবস্থিত হলেও ঢাকার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে এর ছিল ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। ঢাকার স্লোগান প্রতিধ্বনিত হতো রামুতেও। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন-এর আগে-পরে বাঙালিদের ওপর নানা ধরনের শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা, এমনকি ভিন্ন একটি ভাষাকে (উর্দু) রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার পাকিস্তানি চেষ্টার বিরুদ্ধে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রামুর জনগণ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ- বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও তাদের সরকার গঠন করতে না দেয়ায় রামুর সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে সারা দেশের মতো এখানেও ১৯৭১ সালের মার্চে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি।
উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে যাঁরা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তাঁরা হলেন- ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী এমপিএ, প্রফেসর মোশতাক আহমেদ, ওবাইদুল হক, মাস্টার জ্ঞানেন্দ্র বড়ুয়া, মাস্টার গোলাম কাদের, অধ্যাপক দীপক কুমার বড়ুয়া, আজিজুল হক চৌধুরী, মাস্টার আকতার আহমেদ (প্রধান শিক্ষক, রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়), সৈয়দ আলম সওদাগর, ওমর মিয়া প্রমুখ। এঁদের নেতৃত্বে রামুতে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়, যার আহ্বায়ক ছিলেন ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী এমপিএ এবং যুগ্ম- আহ্বায়ক মোশতাক আহমেদ। এছাড়া একটি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ওবাইদুল হক, সৈকত বড়ুয়া, মাস্টার আকতার আহমেদ, মমতাজ, মাস্টার মনোহরী বড়ুয়া, মাস্টার সুমথ বড়ুয়া, কবি আশীষ কুমার ও মামুনুর রশিদ। এঁদের পরিচালনায় বাঁশের লাঠি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
৬ই মে পাকবাহিনী রামুতে প্রথম প্রবেশ করে, তবে তারা এখানে কোনো ক্যাম্প স্থাপন করেনি। কক্সবাজার থেকে এসে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালাত। তাদের সহযোগী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, ইসলামী ছাত্র সংঘ সহ সমমনা কিছু সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কাজ করে। তাদের মধ্যে ফজল কবির, কোরবান আলী, মো. আব্দুল হক (হক সাহেব), খুইল্যা মিয়া, জাকের আহমেদ চৌধুরী, মো. আলম (মাদু) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ফজল কবিরকে সভাপতি এবং মো. আব্দুল হককে সম্পাদক করে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। কোরবান আলীকে করা হয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার।
রামুতে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকবাহিনী যামিনী মোহন শর্মা, কামিনী বড়ুয়া ও শশাংক বড়ুয়া নামে তিনজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এছাড়া তাদের নির্যাতনের শিকার হন হারুন-অর-রশীদ, সৈয়দ আলম সওদাগর, মাস্টার পরিতোষ চক্রবর্তী (বাবুল), মাস্টার এরশাদুল হক, ওমর মিয়া ও বহু নারী। গ্রামের অসংখ্য বাড়িঘর তারা জ্বালিয়ে দেয় এবং হিন্দু পাড়াসহ অনেকের বাড়ি লুট করে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্যাপ্টেন আবদুস ছোবহানের গ্রুপ ও রামু উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে রামুতে বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালিত হয়। তার মধ্যে রামু থানা অপারেশন জোয়ারিয়ানালা লাল ব্রিজ অপারেশন, ঈদগাঁও লাল ব্রিজ অপারেশন উল্লেখযোগ্য।
২৫শে নভেম্বর রামু উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেটি হলো ঈদগড় যুদ্ধ। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার ক্যাপ্টেন আবদুস ছোবাহান-এর নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে ১৬ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৯ আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান সেবক লাফ্রে মুরং শহীদ এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। ৭ই ডিসেম্বর রামু হানাদারমুক্ত হয়। [সুনীল বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!