রামপট্টি গণহত্যা (বাবুগঞ্জ, বরিশাল)
রামপট্টি গণহত্যা (বাবুগঞ্জ, বরিশাল) সংঘটিত হয় ২৯শে এপ্রিল। এতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী শহীদ হয়। বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন বরিশাল বিমানবন্দর থেকে পশ্চিম দিকে হিন্দুপ্রধান গ্রাম রামপট্টি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশেই এ গ্রামের অবস্থান। জঙ্গলঘেরা মাটির রাস্তা, ইরি ধানক্ষেতের আল আর সন্ধ্যা নদীর পাড় ছিল এ গ্রামের প্রবেশ পথ। ২৯শে এপ্রিল দুপুরে দেহেরগতির রাজাকার কাঞ্চন হাওলাদার ও তার সঙ্গীদের দেখানো পথে অর্ধশতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য দুভাগে বিভক্ত হয়ে রামপট্টি গ্রামে প্রবেশ করে। তাদের একদল রামপট্টি গ্রামের মহাদেব হালদারের বাড়িতে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা রাজকুমার হালদার ও তার ভাইয়ের ছেলে রাখাল হালদারকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা মজুমদার বাড়ি ও বেপারী বাড়ি থেকে আরো ৫ জনকে ধরে নিয়ে এসে ৭ জনকে হালদার বাড়ির সামনে দিঘির পাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের অপর দলটি দোয়ারিকা ফেরিঘাট থেকে গৌরনদী থানার বাটাজোর গ্রামের হারুন এবং উজিরপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের জাহাঙ্গীরকে ধরে রামপট্টি নিয়ে আসে। তারা নাজেম নামে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে খুঁজতে থাকে। তারা রামপট্টি গ্রামে সরদার বাড়ির সামনে থেকে নাজেম সরদার (আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)-কে ধরে এনে পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে হারুন, জাহাঙ্গীর ও নাজেমকে গুলি করে। হারুন ও জাহাঙ্গীর শহীদ হন এবং নাজেম সরদার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে যান। ভাই এবং চাচাকে হারানো সুবাস হালদার ও আয়নাল প্রধান এ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী। দুদিন কেউ ভয়ে মৃতদেহের কাছে যায়নি। বৈশাখ মাসের প্রচণ্ড গরমে লাশে পচন ধরলে স্থানীয় লোকজন লাশগুলো আখের রস জ্বাল দেয়ার চুল্লিতে গণকবর দেয়। হারুন ও জাহাঙ্গীরের গলিত লাশ ৩-৪ দিন পর তাদের স্বজনরা এসে নিয়ে যায়।
পাকিস্তানি বাহিনীর আগমনে প্রাণভয়ে অনেকে পালিয়ে গেলেও অনেকে ভিটামাটি ছেড়ে যায়নি। তারাই গণহত্যার শিকার হয়েছে। রামপট্টি গণহত্যায় মজুমদার বাড়ির ৩ ভাইসহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী শহীদ হন, যার মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— রাখাল হালদার (২৫) (পিতা বসন্ত কুমার হালদার), রাজকুমার হালদার (৫৫) (পিতা প্রসন্ন কুমার হালদার), হরিচরণ বেপারী (৬৫) (পিতা নবীন বেপারী), মনোরঞ্জন বেপারী (পিতা হরিচরণ বেপারী), তারিণী মজুমদার (৫০) (পিতা গঙ্গাচরণ মজুমদার), বিচরণ মজুমদার (৪৫) (পিতা গঙ্গাচরণ মজুমদার), অনন্ত মজুমদার (৪২) (পিতা গঙ্গাচরণ মজুমদার), মো. হারুন (৪৫) (বাটাজোর, গৌরনদী) ও মো. জাহাঙ্গীর (৫০) (কচুয়া, উজিরপুর)। গণহত্যার পর শহীদ ৭ জনকে একটি গণকবরে সমাহিত হরা হয়। গণকবরটি পাকা করে বাঁধাই করা আছে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড