You dont have javascript enabled! Please enable it!

রামপুর যুদ্ধ (মনোহরদী, নরসিংদী)

রামপুর যুদ্ধ (মনোহরদী, নরসিংদী) সংঘটিত হয় ১৬ই জুলাই। এতে অর্ধশতাধিক পাকসেনা নিহত ও ৭২ জন আহত হয়। অপরপক্ষে পাকবাহিনী দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায়।
নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের নদীবিধৌত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম রামপুর। এখানকার যুদ্ধটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব-সংবাদের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা অবগত হন যে, ১৫ই জুলাই পাকবাহিনীর ৫টি লঞ্চ নদীপথে কটিয়াদী থেকে রামপুর হয়ে মটখোলা যাত্রা করবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে রামপুর যুদ্ধের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। যুদ্ধের স্থানটি ছিল রামপুর বাজারের একটু পশ্চিমে নদী সংলগ্ন পানের বরজ ও জঙ্গলের পাশে। আবদুর রশীদ তারা মাস্টারের নেতৃত্বে সবাই সিদ্ধান্ত নেন তিনটি লঞ্চের জন্য তাঁদের তিনটি গ্রুপ প্রস্তুত থাকবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যান। ঐ তিন গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হারুন, মোশারফ হোসেন ও সানোয়ার আলীI
প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ১৭টি ব্যাংকার তৈরি করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, পাকবাহিনীর ৩টি লঞ্চ রেঞ্জের মধ্যে আসামাত্র প্রথমে গুলিবর্ষণ করবেন কমান্ডার শেখ হারুন। শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনীর লঞ্চ ঐদিন (১৫ই জুলাই) রামপুরে আসেনি। মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় এক হিন্দু বাড়িতে রাত্রিযাপন করে পরের দিন খুব সকালে পজিশন নেন। চরম উত্তেজনায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। ১৬ই জুলাই সকাল ১০টার দিকে একটি লঞ্চ চলে আসে রেঞ্জের কাছাকাছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় লঞ্চটি সীমানার মধ্যে প্রবেশের পূর্বেই যুদ্ধ পরিকল্পনার সিদ্ধান্তের বাইরে উৎসাহী এক মুক্তিযোদ্ধা হঠাৎ গুলিবর্ষণ করেন। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। উভয় পক্ষের মধ্যে চলতে থাকে গোলাগুলি। দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল এ-যুদ্ধ। পাকবাহিনীর লঞ্চগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে যায়। তবে পিছু হটে যাওয়া দুটি লঞ্চের সৈনিকরা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং গুলিবর্ষণ করে। তারা ৩ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চি মর্টার ব্যবহার করে মুক্তিবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন ছেড়ে পিছু হটে যান। পাকবাহিনী রামপুর গ্রামের কিছু বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়, দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায় এবং স্থানীয় ৮০ বছরের বৃদ্ধ শশী মোহন দাসকে হত্যা করে। তবে রামপুর যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রভূত ক্ষতি হয়। ৫০ থেকে ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৭২ জনের মতো আহত হয়। যুদ্ধের পর হেলিকপ্টার এসে মৃতদেহ ও আহতদের ঢাকায় নিয়ে যায়।
১৭ই জুলাই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে রামপুর যুদ্ধের খবর প্রচারিত হয়। এম আর আখতার মুকুল পঠিত -চরমপত্র-এর শিরোনাম ছিল ‘রামপুরের কেল্লা মাইরে পাক হানাদার বাহিনীর কপোকাত, হত ৫০ আহত ৭২’। রামপুরের এই যুদ্ধকে নিয়ে স্বাধীনতা উত্তরকালে কটিয়াদি ব্যাটেল স্টাডি করেছে ময়মনসিংহ সেনানিবাস। [এম আর মাহবুব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!