You dont have javascript enabled! Please enable it!

রামশহর গণহত্যা (বগুড়া সদর)

রামশহর গণহত্যা (বগুড়া সদর) সংঘটিত হয় ১৩ই নভেম্বর। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেশের অধিকাংশ পীর পরিবারের সদস্যরা যখন পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর বা সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছিল, তখন বগুড়ার রামশহরের পীর পরিবারটি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। এ অভিযোগে হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় ১৩ই নভেম্বর গদিনসীন পীরসহ পরিবারের ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাঁদের সঙ্গে প্রতিবেশী আরো ৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডটি বগুড়ার গোকুল ইউনিয়নের রামশহর পীর বাড়িতে সংঘটিত হয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তরে গোকুল ইউনিয়নে রামশহর গ্রামটি অবস্থিত।
রামশহর গ্রামের সুফি ডাক্তার ক্বাহরুল্লাহ্ পীরের পরিবারটি ছিল খুবই সম্ভ্রান্ত। পরিবারের চারজন সদস্য শহীদ বেলায়েত হোসেনের ছেলে মাকসুদুর রহমান ঠাণ্ডু, ভাতিজা শহীদ আব্দুস সালাম লালু ও জিল্লুর রহমান জলিল এবং ভাগ্নে তোফাজ্জল হোসেন জিন্নাহ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার দিন ১৩ই নভেম্বর রাত্রিতে পীর পরিবারের সদস্যরা সেহেরি খাওয়া শুরু করেছেন। এমন সময় বাড়িতে কয়েকজন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে পাকসেনারা আক্রমণ করে। তারা বাড়িতে প্রবেশ করেই পীর বাড়িতে থাকা দুটি বন্দুকের খোঁজ করে। হানাদারদের আক্রমণের খবর পেয়ে খাবার রেখে পীর সাহেবের ছোটভাই মো. তবিবুর রহমান প্রাচীর টপকে পালানোর চেষ্টা করেন। হানাদাররা তাঁকে লক্ষ করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়ে। কিন্তু তিনি ঘটনাক্রমে বেঁচে যান। গুলির শব্দে গোটা এলাকার মানুষ ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে পড়ে। হানাদাররা ঐ বাড়িসহ প্রতিবেশীদের ঘরে-ঘরে গিয়ে পুরুষ সদস্যদের পিঠমোড়া করে বেঁধে এনে উঠানে সারিবদ্ধ করে বসায়। এ-সময় পীর সাহেব (শহীদ বেলায়েত হোসেন) তাদের ধরে আনার কারণ জানতে চাইলে তাঁর কাছে উল্টো জানতে চাওয়া হয়, বাড়ির মুক্তিযোদ্ধারা কোথায়? কোনো তথ্য না পেয়ে তারা বাড়িতে থাকা বন্দুক ও গুলি বের করে দিতে বলে। ঘরের একটি বাক্স খুলে বন্দুকের গুলি বের করার সময় তার ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মুকুল একটি বন্দুক এনে তার মায়ের পেছনে দাঁড়ায়। তা দেখে এক পাকসেনা হাতের বন্দুক নিয়ে তাকেও অন্যদের সঙ্গে বসিয়ে রাখে। ইতোমধ্যে ফজরের আযান পড়লে পীর সাহেব নামাজ পড়ার জন্য বাইরের মসজিদে যেতে চাইলে তাঁকে বের হতে দেয়নি হানাদাররা। এসময় তারা সবগুলো ঘরে লুণ্ঠন চালায়। এক পর্যায়ে তারা সকলকে বাইরে এনে পীরবাড়ির পুকুরপাড়ে সারিবদ্ধ করে বসিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। পরে লাশগুলো সেখানে ফেলে রেখে তারা চলে যায়।
১৩ই নভেম্বর রামশহর পীরবাড়ি গণহত্যার শিকার ১১ জন হলেন- রামশহরের তবিবুর রহমানের তিন সহোদর পীরজাদা বেলায়েত হোসেন, দবির উদ্দীন ও হাবিবুর রহমান, তবিবুর রহমানের ভাতিজা আব্দুস সালাম লালু, খলিলুর রহমান ও জাহিদুর রহমান মুকুল, তার ফুফাতো ভাই আসগর আলী এবং একই গ্রামের মজিবুর রহমান, হায়দার আলী, বুলু মিয়া ও এ গ্রামের জামাতা মোকসেদ আলী। [মিলন রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!