রামচন্দ্রপুর গণহত্যা (পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা)
রামচন্দ্রপুর গণহত্যা (পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা) সংঘটিত হয় ১১ই জুন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের অবাঙালিরা তাদের সহযোগিতা করে। এ গণহত্যায় ১৬৪ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
ঘটনার দিন ভোররাতে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প থেকে হানাদাররা ঘোড়াঘাট কলোনির অবাঙালিদের নিয়ে কাশিয়াবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা কাশিয়াবাড়ী, জাইতর, চকবালা, পশ্চিম রামচন্দ্রপুর, হাসানখোর এবং কিশোরগাড়ী গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষকে ধরে এনে কাশিয়াবাড়ী হাইস্কুল মাঠে জমায়েত করে। পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়। এদিকে পুরুষদের প্রচণ্ড মারপিট করা হয়। শেষে ১৬৮ জনকে বেঁধে পাশের রাস্তায় নিয়ে লাইন করে দাঁড় করানো হয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা বন্দি মানুষগুলোকে নিয়ে যায় কাশিয়াবাড়ী হাইস্কুল মাঠ থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে চতরা-ঘোড়াঘাট সড়কের পশ্চিম পাশে রামচন্দ্রপুর গ্রামের এক ডোবার কাছে। সেখানে প্রথমে কয়েকজনকে অবাঙালি রজমান আলী ও হানিফ মৌলানা জবাই করে হত্যা করে। অন্যান্যদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
কাশিয়াবাড়ী হাইস্কুল মাঠ থেকে ১৬৮ জনকে ধরে আনা হলেও অল্প বয়স হওয়ায় ৩ জনকে পাকবাহিনী ছেড়ে দেয়। সাগীর আলী শেখ নামে একজন ঘটনাক্রমে বেঁচে যান। বাকি ১৬৪ জনকে এখানে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ৫৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- হারেজ আলী মণ্ডল (পিতা আলেক উদ্দিন মণ্ডল, সগুনা, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), গৌরহরি (পিতা রাজেন্দ্রনাথ পণ্ডিত, জাইতর, ঐ), সীতারাম (পিতা রামহরি, ঐ), খুদিরাম (পিতা হরিকান্ত, ঐ), নরেন্দ্র নাথ সরকার (পিতা রাজেন্দ্রনাথ পণ্ডিত, ঐ), বিনোদ বিহারী সরকার (পিতা গয়ানাথ সরকার, রামচন্দ্রপুর, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), উপেন্দ্র নাথ প্রামাণিক (পিতা হরিনাথ প্রামাণিক, ঐ), গিরীন্দ্র নাথ প্রামাণিক (পিতা উপেন্দ্ৰ নাথ প্রামাণিক, ঐ), অতুল চন্দ্র প্রামাণিক (পিতা কুমুদ চন্দ্ৰ প্রামাণিক, ঐ), কুমুদ চন্দ্র প্রামাণিক (পিতা বঙ্গবিহারী প্রামাণিক, ঐ), খোকারাম মহন্ত (পিতা বিজু নাথ মহন্ত, ঐ), শিবচরণ (পিতা হরিদাস ডাক্তার, ঐ), যতীন্দ্র নাথ সরকার (পিতা ভগীরথ সরকার, ঐ), সীতা রানী (পিতা বিনয় কৃষ্ণ, ঐ), বশির উদ্দিন পাগলা (পিতা জগ মণ্ডল, ঐ), তরঙ্গিণী বালা (পিতা যোগেশ চন্দ্র বালা, ঐ), বিশুরাম (পিতা খোকারাম, ঐ), কিন্তু প্রধান (পিতা পূর্ণচন্দ্র প্রধান, হাসানখোর, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), কালু রাম দাস (পিতা নগেন্দ্র নাথ দাস, ঐ), মহিম চন্দ্ৰ (পিতা খগেন্দ্র চন্দ্র, ঐ), কুসুম বালা (পিতা কেশর চন্দ্র, ঐ), রাসমণি সরকার (পিতা ভরসারাম সরকার, ঐ), মেনকা বালা (পিতা শ্যামসুন্দর বালা, ঐ), সুধা বালা (পিতা পঞ্চরাম বালা, ঐ), রামবল্লভ কর্মকার (পিতা রামনারায়ণ কর্মকার, কাশিয়াবাড়ী, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), রাজেন্দ্র নাথ শীল (পিতা রাজবিহারী শীল, ঐ), আনছার আলী মণ্ডল (পিতা শরিফ উদ্দিন মণ্ডল, ঐ), আমান উল্লাহ মণ্ডল চেংটু (পিতা খালেক মামুদ, ঐ), বাহার উদ্দিন (পিতা কুরান শেখ, ঐ), আকালু শেখ (পিতা আরজউদ্দিন, ঐ), শুকটু পাগলা (পিতা পঞ্চানন, ঐ), ভগবান চন্দ্র শীল (পিতা ক্ষুদিরাম চন্দ্র শীল, ঐ), প্রফুল্ল চন্দ্র শীল (পিতা ক্ষুদিরাম চন্দ্র শীল, ঐ), নিতাই চন্দ্র কর্মকার (পিতা কালীপদ কর্মকার, ঐ), সন্ধ্যা রানী (পিতা প্রিয়নাথ, ঐ), নিমাই চন্দ্ৰ কুড়ি (পিতা নিতাই চন্দ্ৰ কুড়ি, ঐ), শিমস্ত (পিতা সুশীল চন্দ্র শীল, ঐ), হায়দার আলী মণ্ডল (পিতা কছির আলী মণ্ডল, কিশোরগাড়ী, ঐ), গোলজার রহমান মাস্টার (পিতা ফহির উদ্দিন, ঐ), নজির উদ্দিন (পিতা কছিম উদ্দিন, ঐ), দেলোয়ার হোসেন মুন্সি (পিতা রহিম উদ্দিন, ঐ), ভোলা (পিতা ভানু, মহদিপুর, পলাশবাড়ী), কেরু (পিতা গোপাল, ঐ), ধীরেন (পিতা টুরু, ঐ), চেংটু (পিতা ধরণী, ঐ), যতীন (পিতা হরিভোলা, ঐ), গাদু সরকার (পিতা গয়ানাথ সরকার, রামচন্দ্রপুর, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), মহিন্দ্ৰ নাথ দাস (পলাশবাড়ী), মুকুন্দ শীল (পলাশবাড়ী), রমেশ চন্দ্র সরকার (পবনাপুর, পলাশবাড়ী), মণীন্দ্র লাল সরকার (ঐ), গগন চন্দ্র দাস (ঐ), সরোজিনী (পিতা কেশব চন্দ্র দাস, হাসানখোর, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), লালবিহারী (হাসানখোর, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), ভাদু মিয়া (পিতা ফণী শেখ, চকবালা, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী), খুদি রানী (পিতা পরাণ সাধু, হাসানখোর, কিশোরগাড়ী, পলাশবাড়ী) ও শ্যামলী রানী (পিতা বাদল সরকার, ঐ)। গণহত্যার স্থানে ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড