You dont have javascript enabled! Please enable it!

রামকান্তপুর গণহত্যা (লালপুর, নাটোর)

রামকান্তপুর গণহত্যা (লালপুর, নাটোর) সংঘটিত হয় ১৭ই এপ্রিল। এতে ৩৫-৪০ জন নিরীহ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন। গণহত্যার স্থানটি চিহ্নিত করে একটি নামফলক বসানো রয়েছে।
৬নং দুয়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ৫ কিমি দক্ষিণে রামকান্তপুর গ্রামটি অবস্থিত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দালালদের পরামর্শে রামকান্তপুর আক্রমণ করে। রাতের অন্ধকারে তারা নিরীহ মানুষদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে। ঘুমন্ত মানুষগুলোকে বাড়ি থেকে বের করে রামকান্তপুরের একটি আমবাগানে এনে হত্যা করে। তাদের পরনের কাপড় খুলে সেই কাপড় দিয়েই বেঁধে ফেলে। এরপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা। মূলত বিহারি আব্দুল মজিদ, ওয়ালিয়ার এলাহী ডাক্তার, মোহরকয়ার তসিকুল ইসলাম, জসীম উদ্দিন, আনোয়ারুল, আব্দুলপুরের আবুল কাশেম, শেখচিলানের হাবিবুর রহমান, বিলমাড়িয়ার আব্দুর রহিম, হাঁসমারিয়ার সেলিম উদ্দিন প্রমুখ রাজাকার ও শান্তি কমিটি-র সদস্যের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী এখানে আসে। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে জানিয়েছিল এ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগীরা রয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী তাদের কথায় ঈশ্বরদি বিমানবন্দর থেকে লালপুর থানার রামকান্তপুরে অপারেশনে আসে। গুলি করেই শেষ হয়নি হানাদারদের অত্যাচার। আবুল হোসেন, দুখু মিয়া, তইজ উদ্দিন প্রমুখ আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছিলেন। তাদের ওপর পুনরায় বেয়নেট চার্জ করা হয়। এত নির্যাতনের পরও তাঁরা ঘটনাক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। তইজ উদ্দিনের হাতের শিরায় (রগ) গুলি লাগায় তার হাতটি পঙ্গু হয়ে যায়। ছামছের আলী প্রামাণিক নামে অপর একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি যন্ত্রণা ভোগ করে ১০ বছর পর মারা যান। টাকা-পয়সা, মালামাল, গবাদিপশু প্রভৃতি লুট করে, বাড়িঘর পুড়িয়ে রামকান্তপুরকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী ও তাদের দোসররা। সেদিন রাতে রামকান্তপুরের প্রায় ৩৫-৪০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল তারা।
রামকান্তপুর গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন— হাজের উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা লবাই প্রামাণিক, রামকান্তপুর), আ. মালেক (পিতা কফির প্রামাণিক, রামকান্তপুর), আব্দুল কাশেম মণ্ডল (পিতা চাঁদ আলি মণ্ডল, রামকান্তপুর), আরসেদ আলী (পিতা মজির উদ্দিন, ডহরশৈল), এরশাদ আলী (পিতা বয়েন উদ্দিন, ডহরশৈল), মুনছের আলী (পিতা জয়নাল আবেদিন, ডহরশৈল), মসলেম উদ্দিন (পিতা তাজের মুন্সি, ডহরশৈল), ইসমাইল হোসেন (পিতা তাজের মুন্সি, ডহরশৈল), জিয়াউর রহমান (ডহরশৈল), আস্ত বিশ্বাস (পিতা গোপাল বিশ্বাস, ডহরশৈল), আ. করিম (পিতা আদম আলী, ডহরশৈল), আবেদ আলী (পিতা সাহাদ আলী মোল্লা, ডহরশৈল), সিরাজ উদ্দিন (পিতা ইয়াদ আলী প্রামাণিক, রামকান্তপুর), আ. কাদের (পিতা মালিক উদ্দিন, রামকান্তপুর) ও সিরাজ উদ্দিন (পিতা মালিক উদ্দিন প্রামাণিক, রামকান্তপুর), জিয়ার উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন-২, তয়েজ উদ্দিন, লাঠু প্রামাণিক, নজরুল ইসলাম মুকুল, আবুল হোসেন প্রামাণিক, নায়েব আলী, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস, ফালান, রজব আলী, তাইরুদ্দিন, আনিছুর রহমান, ইব্রাহিম, সুরাত আলী, জহুরুল ইসলাম, আরজেদ আলী, ইসমাইল হোসেন, মুকুল ও আব্দুল কুদ্দুস। [সুমা কর্মকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!