রাজিবপুর গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)
রাজিবপুর গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৫ই সেপ্টেম্বর। এতে ৮ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা শহরের পূর্বদিকে একটি হাওরের পর মৃগা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম রাজিবপুর। বর্ষাকালে এ এলাকার হাওর পানিতে পূর্ণ হয়ে গেলে সাগরের রূপ ধারণ করে। বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে তখন ভাসমান দ্বীপের মতো মনে হয়। রাজিবপুর তেমনি একটি গ্রাম। কুমার এবং গোয়ালা সম্প্রদায়ের লোকজন এ গ্রামে বাস করে। তারা নামের শেষে পাল কিংবা গোপ পদবি ব্যবহার করে। এ গ্রামের পশ্চিম দিকে ইটনা এবং সমান দূরত্বে পূর্বদিকে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ থানা। রাজিবপুরের মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য ইটনা ও আজমিরীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার খবর শুনে তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছিল। বর্ষার সময় বিশাল জলরাশির মাঝখানে বসবাসকারী এসব মানুষের ভয় ও আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। এরূপ অবস্থার মধ্যেই ১৫ই সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে আজমিরীগঞ্জ থানার রাজাকার কসাই সিরাজ এবং আলী হোসেন ১০-১২ জন পাকিস্তানি সৈন্য এবং সমান সংখ্যক রাজাকার নিয়ে অতর্কিতে রাজিবপুর গ্রামে হানা দেয়। পাকসেনা ও রাজাকাররা রাজিবপুরের ঠাকুরধন পালের বাড়ির ঘাটে নৌকা ২. থেকে নেমেই লোকজনদের ধাওয়া করে। আতঙ্কিত অনেকে উপায়ান্তর না দেখে জলে ঝাঁপ দেয়। অন্যরা যে যেদিকে পারে পালাতে থাকে। পাকসেনা আর রাজাকাররা গ্রাম থেকে অনেককে আটক করে। আটককৃত সবাইকে তারা ঠাকুরধন পালের বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। যাবার সময় পাকিস্তানি সেনারা একটি যুবতী মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়।
সেদিন রাজিবপুর গ্রামের যারা শহীদ হন, তারা হলেন— ধরণী ঘোষ (পিতা কৈলাশ ঘোষ), মোহনবাসী পাল (পিতা আবু পাল), নারায়ণ পাল (পিতা শ্রী কুমার পাল), রসলাল গোপ (পিতা তরণী গোপ), বিনন্দ গোপ, বলাই চন্দ্র পাল (পিতা আদিত্য পাল), লেচু পাল (পিতা কটু পাল) ও বুধাই পাল (পিতা কটু পাল)। [মো. রওশন আলী রুশো]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড