You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজৈর থানা দখল যুদ্ধ (রাজৈর, মাদারীপুর)

রাজৈর থানা দখল যুদ্ধ (রাজৈর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২১শে নভেম্বর। এতে নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাদারীপুর মহকুমা মুজিব বাহিনী-র প্রধান সরওয়ার হোসেন মোল্লা। সঙ্গে ছিলেন মুক্তিবাহিনীর রাজৈর থানা কমান্ডার এম এ কাদের মোল্লা, রাজৈর থানার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাইয়ুম মীর প্রমুখ।
২০শে নভেম্বর ছিল ঈদুল ফিতর। ১৯শে নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সরকারি প্রেসনোটে বলা হয় ‘ঈদের দিনে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটতে দেয়া হবে না।’ সরকারের জারিকৃত প্রেসনোটের ঘোষণা অকার্যকর করার জন্য প্রধানত মুজিব বাহিনীর উদ্যোগে ১৯শে নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাজৈর থানা আক্রমণ করেন।
পরিকল্পনা অনুসারে সরওয়ার হোসেন মোল্লা ও এম এ কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল থানা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে এ আক্রমণ করেন। থানার পশ্চিম পাশে এ কে ফজলুল হক, হারুন-উর-রশিদ, রফিকুল, মুছা প্রমুখ; থানার পূর্বপাশে এম এ কাদের মোল্লা, আবদুল বারী ও অন্যরা; কমান্ডার শেখ সেকান্দার আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম, আহম্মদ আলী দক্ষিণে এবং শুকদেব মণ্ডলসহ ৩০-৩৫ জনের একটি দল থানার উত্তর পাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। বদরপাশা খালের ঢালের নিচু এলাকায় অবস্থান নেয় মূল আক্রমণকারী দল। সার্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করেন সরওয়ার হোসেন মোল্লা ও শাজাহান খান। এ-যুদ্ধে আরো অংশ নেন শেখ সেকান্দার আলী, কাজী আবুল হোসেন, আবদুল বারেক মাতুব্বর, পান্না মিঞা, ওহাব শেখ, নূর মহম্মদ শেখ, ফজলু মোল্লা, রশিদ ফকির, সুলতান বেপারী, হাকিম, তারুদ্দিন হাওলাদার, আয়নাল শেখ, ঈমান শেখ, সাহেব আলী খালাসী, হাফিজুর রহমান, মহম্মদ আলী, করিম বেপারী, আতাহার আলী চৌধুরী প্রমুখ। পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে। রাত ৩-১৫ মিনিটে কমান্ডারের নির্দেশে আক্রমণকারী দলের অস্ত্রগুলো এক সঙ্গে গর্জে ওঠে। অবরুদ্ধ রাজৈর থানা ভবনের রাজাকার ও পাকিস্তানি মিলিশিয়ারা সাহায্য চেয়ে ওয়ারলেস করে টেকেরহাট এবং এ আর হাওলাদার মিলের সেনা ক্যাম্পে। বার্তা পেয়ে দ্রুত গতিতে পাকিস্তানি সেনা দল এগিয়ে আসে রাজৈরের পথে। শত্রুর গাড়িবহর বৈলগ্রাম ব্রিজের পাশে মুক্তিবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইনের আওতায় আসতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। একই সঙ্গে শুরু হয় মেশিন গানের ফায়ার। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। বৈলগ্রাম ব্রিজের যুদ্ধে ৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। রাজাকার মনি হাওলাদার, রফিক হাওলাদার, মোক্তার মৃধা ও ছালাম খাঁ মারাত্মক আহত হয়। সারারাত যুদ্ধ চলে। থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও মিলিশিয়াদের কাছে ভারী মেশিনগানসহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিল। তারা তীব্র পাল্টা আক্রমণ চালায়। শেষরাতে মাদারীপুর থেকে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা অগ্রসর হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান।
পাকিস্তানি বাহিনীকে যেসব রাজাকার সহায়তা করে, তাদের মধ্যে ছিল— মোতাহার মিয়া (দুর্গাবর্দী, বদরপাশা ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান), কামুক খা (পূর্বদ্বারাদিয়া), তরফান হাওলাদার (দুর্গাবর্দী), আফ্রিন মাতুব্বর (বদরপাশা), আবদুল বারী হাওলাদার প্রমুখ। ৭ই ডিসেম্বর রাতে টেকেরহাটের সেনা ক্যাম্প ছেড়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা ফরিদপুর চলে গেলে রাজৈর থানার রাজাকার ও পুলিশ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং থানা শত্রুমুক্ত হয়। [শেখ নাছিমা রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!