You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাণীগঞ্জ বাজার গণহত্যা (জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ)

রাণীগঞ্জ বাজার গণহত্যা (জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১লা সেপ্টেম্বর। এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারআলবদরদের হাতে দেড় শতাধিক মানুষ নির্মম গণহত্যার শিকার হন। তন্মধ্যে ৫৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। হানাদাররা রানীগঞ্জ বাজার লুণ্ঠন শেষে ১২৮টি দোকান পুড়িয়ে দেয়।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর তীরে রানীগঞ্জ বাজার অবস্থিত। এখানে একটি নৌবন্দর রয়েছে। এ কারণে বাজারটি সবসময় জমজমাট থাকত। জগন্নাথপুর থেকে রাণীগঞ্জ বাজারের দূরত্ব প্রায় ৭ কিমি। ১লা সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর সুবেদার সরফরাজ খানের নেতৃত্বে পাকবাহিনী ও রাজাকারআলবদরদের বিশাল একটি গ্রুপ জগন্নাথপুর থেকে বেশ কয়েকটি নৌকাযোগে রাণীগঞ্জ বাজারের ঘাটে এসে নামে। তারা স্থানীয় দালাল আছাব আলী (জগন্নাথপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান), আহমদ আলী (হাবিবপুর), মনোহর আলী (রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান), রাজাকার ইয়াহিয়া (রাণীগঞ্জ) ও দালাল আবদুর রাজ্জাকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাণীগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করে এবং শান্তি কমিটি গঠনের কথা বলে বাজারের দুই শতাধিক লোককে কুশিয়ারা নদীর তীরে নিয়ে যায়। তারপর নদীর কিনারা ঘেঁষে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এ-সময় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ৫০ জন আত্মরক্ষা করে। রাণীগঞ্জ বাজার গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন— আনোয়ার হোসেন ও আকিক হোসেন (দুই সহোদর, গন্ধর্বপুর), মন্তাজ আলী (আলীপুর), আকাল মিয়া (আলীপুর), ধন মিয়া-১ (আলীপুর), আবদুল নূর (আলীপুর), ধন মিয়া-২ (আলীপুর), মোজাম্মিল আলী (বাসাখয়না), আফতাব আলী (বাসাখয়না), মানিক মিয়া (ছালামতপুর), নাইওর মিয়া (ছালামতপুর), রসিক উল্যাহ (উত্তর লামরু), আদুল মানাফ (বোয়ালজোড়), অশ্বিনী কুমার দাস (হোসেনপুর), জানু মিয়া (বেনগাঁও), দরছ মিয়া (কান্দিপাড়া), নিমাই নমঃশূদ্র (দেবপাড়া), প্রমোদ রঞ্জন শীল (গুজাখাইর), সুরুত মিয়া (দৗলতপুর), আবু মিয়া (হরহরপুর), হাবিব মিয়া (ছালামতপুর), স্নেহলতা চক্রবর্তী (শিবপাশা), কুমুদ চক্রবর্তী (কানাইপুর), সুরেশ মহালদার (কানাইপুর), হীরালাল সাহা (কানাইপুর), রসিক লাল সাহা (কানাইপুর), সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী (রাণীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী), আলফু মিয়া (ব্যবসায়ী), আব্দুল মজিদ (ব্যবসায়ী), মছব্বির মিয়া (ব্যবসায়ী), তছই মিয়া (ব্যবসায়ী), মদই উল্যাহ (ব্যবসায়ী), ডা. সিরাজুল ইসলাম, গৌছুল আলম, বোরহান উদ্দিন, হাজি আবদুল মোমিন, মিছির আলী, আলতা মিয়া, মাসুক আহমদ, নূর মিয়া, আবদুল আজিজ, জাফর আলী, ফাজিল মিয়া, মদরিছ আলী, সোনাফর আলী, ছয়েফ উল্যাহ, মকবুল হোসেন, আবদুল আলীম, তাজু মিয়া, সারেং মোহাম্মদ, আনার মোহাম্মদ, লালির আলী, আব্বাস উদ্দিন ও কাছম আলী। ঐ দিনের গণহত্যার সময় যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে আত্মরক্ষা করেন, তাদের মধ্যে মজমিল আলী, হুসিয়ার আলী, খলিল আহমেদ, ওয়াহিদ আলী, জওয়াহেদ আলী, তফাজ্জল আলী, আকলু মিয়া, বিনোদ রায়, আলকাছ আলী, ইদ্রিস আলী, ফরিদ আহমদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এদিন পাকবাহিনী ও রাজাকাররা রাণীগঞ্জ বাজার লুণ্ঠন শেষে ১২৮টি দোকান পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ধান ভাঙানোর কল ও করাত কলেও আগুন লাগিয়ে দেয়। ১৯৮৭ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু খালেদ চৌধুরীর উদ্যোগে রাণীগঞ্জ হাইস্কুল প্রাঙ্গণে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!