You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাণীনগর থানা আক্রমণ (রাণীনগর, নওগাঁ)

রাণীনগর থানা আক্রমণ (রাণীনগর, নওগাঁ) পরিচালিত হয় ৯ই ডিসেম্বর। এ-সময় থানায় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা অবস্থান করছিল। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপের যৌথ আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ-যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ৪০ জন পাকসেনা ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। এখান থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। যুদ্ধে পাকসেনারা পরাস্ত হলে রাণীনগর থানা শত্রুমুক্ত হয়।
৯ই ডিসেম্বর মুজিব বাহিনী-র উচ্চ প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা রাণীনগর থানা আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ বাহিনীর নেতা ছিলেন আখতারুজ্জামান রঞ্জু ও হারুন-অল-রশীদ। এ বাহিনী ছাড়া কমান্ডার আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে মকলেছুর রহমান রাজা ও আব্দুল মালেক গ্রুপ, ওহিদুর বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আলমগীর কবিরের নেতৃত্বাধীন এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ও কমান্ডার ইলিয়াস হকের নেতৃত্বে কমিউনিস্টদের একটি গেরিলা গ্রুপ এ আক্রমণে অংশ নেয়। ওহিদুর বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কমান্ডার আশরাফ, সাদ, আলী, গামা, সান্টু, গ্রুপ কমান্ডার কাশেম (কাশিয়াবাড়ি), ইয়াছিন, সিরাজ, আশরাফ, শফির, আমজাদ, হেলু, হারেস, শাহাদ, জসিমউদ্দীন, আনোয়ার হোসেন বুলু, বক্কার, আনছার আলী, আকু, জরিপ প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ আক্রমণে মর্টার, লাইট মেশিনগান, সাব মেশিনগান, বিভিন্ন মডেলের রাইফেল, গ্রেনেড ও রকেট লাঞ্চারসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
৯ই ডিসেম্বর খুব সকালে খট্টেশ্বর গ্রামের সন্নিকটে অবস্থিত ইটভাটায় তিনটি এলএমজি-সহ মুজিব বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। সকাল ৮টার দিকে শত্রুসেনাদের গতিবিধি রেকি করার জন্য মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হারুন-অল-রশীদ ছদ্মবেশে রাণীনগর বাজারে যান। একটি স্টলে চা পান করার অজুহাতে তিনি পাকসেনাদের সংখ্যা, অবস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথবাহিনী রাণীনগর থানার চারদিকে অবস্থান নেয়। সিদ্ধান্ত হয় যে, থানার পূর্বদিক থেকে কোনো আক্রমণ করা হবে না। পশ্চিম দিক থেকে আলমগীর কবিরের গ্রুপ, দক্ষিণ দিক থেকে আব্দুল মালেকের গ্রুপ এবং উত্তর দিক থেকে আখতারুজ্জামান রঞ্জুর গ্রুপ এক সঙ্গে আক্রমণ করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণা ছিল, থানা আক্রান্ত হলে এক পর্যায়ে শত্রুসেনারা পূর্বদিক থেকে পালানোর চেষ্টা করলে সেদিকে এম্বুশে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আঘাত হানতে সক্ষম হবেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ চলার পরও পরিকল্পনা মোতাবেক ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত পাকসেনাদের গোলাবারুদ কমে যাওয়া ও দীর্ঘ সময় আক্রমণ প্রতিহত করায় ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হওয়ায় তারা ১০ই ডিসেম্বর বিকেলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ৪০ জন পাকসেনা ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। এখান থেকে অর্ধশতাধিক রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। থানার কয়েকটি কক্ষ থেকে ১০-১২ জন বীরাঙ্গনাকে উদ্ধার করা হয়। এ-যুদ্ধে ওহিদুর বাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার শাহাদাত আলী ওরফে সাদ আলী শহীদ হন। গেরিলা যোদ্ধা আব্দুল গফুর ও কাশেম যুদ্ধরত অবস্থায় পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হলে রাণীনগর থানা শত্রুমুক্ত হয়।
রাণীনগর থানা আক্রমণের সময় মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় জনগণের পূর্ণ সহযোগিতা লাভ করেন। এলাকাবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও পানির ব্যবস্থা করে। অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়ান। এ আক্রমণে নারীদের অবদানও উল্লেখ করার মতো। তারা পুরুষদের পাশাপাশি যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গামছায় বেঁধে মাটির বাসনে করে ভাত-তরকারি ও কলসিতে করে পানি সরবরাহ করেন। [চিত্তরঞ্জন মিশ্র]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!