You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজাপুর যুদ্ধ (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ)

রাজাপুর যুদ্ধ (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৭ই জুন। এতে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। ১৪ই জুন হরিণাহাটি যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ-যুদ্ধে তাদের ৭ জন সৈন্য আহত এবং ৩টি অস্ত্র হাতছাড়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা গোপালগঞ্জ ক্যাম্প থেকে হেমায়েত বাহিনী-র রাজাপুরের স্থায়ী ক্যাম্পের ওপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭ই জুন পাকিস্তানি বাহিনী গোপালগঞ্জ থেকে ২০টি লঞ্চ নিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে বিশারকান্দি ও সাতলা- বাগধা পথে পয়সারহাট হয়ে রাজাপুর ক্যাম্পে আক্রমণ করে। হেমায়েতও তাঁর বাহিনী নিয়ে পেছন দিক থেকে লঞ্চগুলোর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান। রাজাপুর ঘাঁটি এবং হেমায়েতের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর পাকবাহিনী তখন ব্যাপকভাবে মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে অবস্থানটির পতন ঘটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। ৫ ঘণ্টার মতো যুদ্ধ চলে। হেমায়েত বাহিনী আগে থেকেই রাজাপুর ক্যাম্পের চারদিকে শক্ত বাংকার খুঁড়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। হেমায়েত উদ্দিন, বীর বিক্রমএর যুদ্ধ-কৌশলের কারণে পাকবাহিনী অনেকটা নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। একের পর এক পাল্টা মেশিনগানের গোলা ছুড়ে পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করেন ফেলে হেমায়েত বাহিনীর যোদ্ধারা। ২টি লঞ্চের ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করার পরই হানাদার বাহিনী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পূর্ব-উত্তর দিক থেকে হেমায়েত বাহিনীর দ্বিমুখী আক্রমণের মুখে তারা সাতগ্রাম সংলগ্ন ওয়াপদা খালের বাঁক হয়ে কোনোরকমে পশ্চাদপসরণ করতে সক্ষম হয়। এ-সময় তারা তাদের একটি লঞ্চও ফেলে রেখে যেতে বাধ্য হয়। প্রতিশোধ নিতে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তারা গোপালগঞ্জ ফিরে যায় এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারআলবদররা সাতলা- বাগধা বেড়িবাঁধ হয়ে পালিয়ে যায়।
রাজাপুর যুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর এ অভূতপূর্ব সাফল্যে মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে এলাকা মুখরিত করে তোলেন। স্থানীয় জনতা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাঁদের নিয়ে পয়সারহাটে আসে। সেখানে এক পর্যায়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক জনসভার আয়োজন করা হয়, যা মুক্তিযোদ্ধা-জনতার এক বিজয় উৎসবে পরিণত হয়। ঐ জনসভায় জনতার পক্ষ থেকে হেমায়েতকে ‘মেজর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। জনসভায় হেমায়েত সংক্ষিপ্ত একটি ভাষণ প্রদান করেন। জনগণকে তিনি মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একযোগে এলাকা হানাদারমুক্ত করার আহ্বান জানান। এ-যুদ্ধে জয়ের ফলে কোটালীপাড়া থানার প্রায় ২০ মাইল এলাকা মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। প্রতিটি ঘরে ওড়ে জয় বাংলার পতাকা। এদিন হেমায়েত উদ্দিন সাতলা গ্রামের নদীর বাকে মুক্তিবাহিনীর একটি অগ্রবর্তী ঘাঁটি স্থাপন করেন, যাতে পাকবাহিনী রামশীল, পয়সারহাট বা রাজাপুর এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে প্রথমেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে। রাজাপুর ও রামশীল এলাকার মানুষ আজো এ- যুদ্ধের কথা স্মরণ করে গর্ববোধ করে। [রবীন্দ্রনাথ অধিকারী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!