You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজার বাড়ি গণহত্যা (চাটখিল, নোয়াখালী)

রাজার বাড়ি গণহত্যা (চাটখিল, নোয়াখালী) সংঘটিত হয় ৪ঠা সেপ্টেম্বর। এতে ১৩ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের রাজার বাড়ির সামনের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। এখানে প্রশিক্ষণ দিতেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত আবুল কাসেম। তিনি তখন ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন।
ঘটনার দিন সকাল ৬টার দিকে চৌমুহনী টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪০ জন রাজাকার কে এখানে পাঠায়। তাদের বাড়ি চৌমুহনী, বজরা, সোনাইমুড়ি ও মনোহরগঞ্জ এলাকায়। তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দেয় এবং এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেবে বলে জানায়। তাদের কথায় বিশ্বাস করে আশপাশের কিছু লোক সেখানে এসে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণ পর ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য ঘটনাস্থলে এসে তাদের সহ পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলো থেকে আরো কয়েকজনকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। আবুল বাশার (পিতা আবদুল কাদের) নামে একজন যখন দেখল তার পিতা ও ভাইকে তার চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছে, তখন সে মৃত্যুকে ভয় না করে একজন পাকিস্তানি সৈন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার কান কামড়ে রক্তাক্ত করে কিছু অংশ ছিড়ে ফেলে। ঐ সৈন্যের হাতে-পায়ে আঘাত করে সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথার বাম পাশে এবং বাঁ পায়ে গুলি লাগে। ঐ অবস্থায় সে ধানক্ষেতের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকে এবং আরো কয়েকজনকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। মোবারক হোসেন (পিতা ইদ্রিস মিয়া) নামে একজন নৌকায় করে কিছু লোককে এনেছিল ট্রেনিং দেয়ার জন্য। পাকসেনারা তাকে গুলি করলে সেও পানিতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়।
রাজার বাড়ি গণহত্যায় মোট ১৩ জন শহীদ হন। তারা হলেন- আবদুল কাদের (পিতা আমজাদ আলী, রাজার বাড়ি), আবদুল জলিল (পিতা আবদুল কাদের, রাজার বাড়ি), জহুরুল হক (পিতা ইদ্রিছ মিয়া, নুর মিয়া ব্যাপারী বাড়ি), মোমতাজ মিয়া (পিতা চাঁন মিয়া, নুর মিয়া ব্যাপারী বাড়ি), আমিন উল্যা (পিতা সরাফত উল্যা, নুর মিয়া ব্যাপারী বাড়ি), ফজলুর রহমান (পিতা চৌধুরী মিয়া, ইয়াসিন ব্যাপারী বাড়ি), আবুল খায়ের (পিতা জালাল উদ্দিন, কালা গাজী ব্যাপারী বাড়ি), সিরাজ মিয়া (পিতা গনি মিয়া, টিপরা বাড়ি), চাঁন মিয়া (পিতা ফজু মিয়া, বেছার বাড়ি), লাল মিয়া (পিতা কালা মিয়া, পাটওয়ারী বাড়ি), রাজেন্দ্র চন্দ্র নাথ (পিতা গোবিন্দ চন্দ্র নাথ, যুগীবাড়ি), যতীন্দ্র চন্দ্র নাথ (পিতা চন্দ্ৰ নাথ, যুগীবাড়ি) এবং মনোরঞ্জন নাথ (পিতা বিপিন চন্দ্ৰ নাথ, যুগীবাড়ি)। এদের সকলের বাড়ি মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে। [শওকত কামাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!