You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজবাড়ী থানা দখল যুদ্ধ (রাজবাড়ী সদর)

রাজবাড়ী থানা দখল যুদ্ধ (রাজবাড়ী সদর) সংঘটিত হয় ১৪-১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্য দিয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। এ-যুদ্ধে অনেক বিহারি রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। অপরপক্ষে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। রাজবাড়ী সদর উপজেলায় স্বাধিনতাবিরোধী
শান্তি কমিটি, রাজাকার ও অবাঙালি বিহারিদের তৎপরতা এতই তীব্র ছিল যে, ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করলেও রাজবাড়ী তখনো সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি। বিজয় দিবসের পরেও দুদিন পর্যন্ত রাজবাড়ী শহর ও প্রশাসন অবাঙালি বিহারিদের দখলে ছিল। তারা এখানে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারীনির্যাতনসহ সকল প্রকার মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল। সারাদেশে ক্রমাগতভাবে হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর পেয়ে ভীত ও অস্থির হয়ে উঠলেও তারা আত্মসমর্পণ না করে অস্ত্র ধারণ করেই থাকে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। রাজবাড়ী শহরের লোকোসেড ও রেলকলোনি ছিল অবাঙালি বিহারিদের প্রধান ঘাঁটি। রাজবাড়ীর সব এলাকার বিহারিরা ইতোমধ্যে রেলওয়ে নিউকলোনিতে ও লোকোসেডে একত্রিত হয়ে বাঙ্কারে-বাঙ্কারে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবেলা করার জন্য ঘোষণা দেয়, ‘সারাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলেও রাজবাড়ী পাকিস্তানই থাকবে।’ অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের এ অহঙ্কার চূর্ণ করার জন্য প্রস্তুত হন।
১১ই ডিসেম্বর কমান্ডার ইলিয়াস তাঁর বাহিনী নিয়ে এরেন্দা ক্যাম্প থেকে এসে রাজবাড়ী থানা আক্রমণ করেন। তাঁরা রাজাকার ও বিহারিদের কবল থেকে পুলিশ প্রশাসনকে মুক্ত করে বিপুল পরিমাণ রাইফেল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই বিহারিরা রাজবাড়ী থানা পুনর্দখল করে নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা এ-সময় রাজবাড়ী শহরের চতুর্দিকে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন। বিহারিদের পালানোর সকল রাস্তা বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে থাকেন রাজবাড়ী আক্রমণের জন্য। রাজবাড়ী জেলার (তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা) সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের প্রায় সবগুলো গ্রুপ শহরের আশপাশে অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত আক্রমণের প্রতীক্ষায় থাকে। মুক্তিবাহিনী-র মহকুমা কমান্ডার শহীদুন্নবী আলম তখন উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে অবস্থানকারী গ্রুপ কমান্ডারদের মধ্যে সমন্বয় করে চূড়ান্ত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মঞ্জুর মোর্শেদ সাচ্চু (পাংশা), জিল্লুর হাকিম, নাসিরুল হক সাবু, আব্দুল মালেক মিয়া ও এনামুল বারী মজনু (যশাই), আব্দুল মতিন মিয়া (মাছপাড়া), আব্দুর রব (মৃগী), হোসেন কমান্ডার (কালুখালি) ও আবুল কালাম আজাদ পাংশা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে ১৩ই ডিসেম্বর পাংশা থেকে রাজবাড়ীর দিকে অগ্রসর হন। ১৪ই ডিসেম্বর সকল মুক্তিযোদ্ধা একযোগে থানা আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধ চলে ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে অনেক বিহারি রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। মৃগীর দিয়ানত আলী, ধুঞ্চির শুকুর আলী, হাবাসপুরের আরশাদ আলী, বাহাদুরপুরের আজগর আলী, কশবামাজাইলের সাদী, কলিমোহরের রফিকুল ইসলাম রফিক ও মাছপাড়ার শফিক জীবন দিয়ে রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত করেন। [আবু রেজা আশরাফুল মাসুদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!