রাঙ্গুনিয়া থানা অপারেশন (রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম)
রাঙ্গুনিয়া থানা অপারেশন (রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম) আগস্ট মাসের শেষদিকে পরিচালিত হয়। এতে ২ জন সিপাহিসহ কয়েকজন রাজাকার আটক ও ২টি রাইফেলসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সুবেদার মেজর ২টি এম আলী – ভারী অস্ত্র-শস্ত্রসহ মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে আগ্রহী আর্মি, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে ১ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া এলাকায় যুদ্ধ করতে-করতে ছিপছড়ি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এসে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ক্যাপ্টেন করিমও তাঁর বাহিনী নিয়ে একই স্থানে অবস্থান নেন। সুবেদার মেজর টি এম আলীর নেতৃত্বে এ কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করে। এ কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের মধ্যে ছিল রাঙ্গুনিয়া থানা অপারেশন। আগস্টের শেষদিকে কোনো একদিন রাত ১টার দিকে কোম্পানি কমান্ডার টি এম আলীর নির্দেশে হাবিলদার বজলুর রহমান, হাবিলদার আখতার হোসেন, হাবিলদার ছালামত উল্লাহ, হাবিলদার আবদুস সামাদ, হাবিলদার সুজাউদ্দিন, হাবিলদার ফজলুল হক, ছাত্রনেতা ইফতেখার হোসেন ও আবু তাহেরসহ ৪০-৫০ জনের একটি দল কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিয়ে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে অতর্কিতে আক্রমণ করে রাঙ্গুনিয়া থানা দখল করে নেয়। মধ্যরাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঝটিকা আক্রমণে থানার অফিসার ও সিপাহিরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রাতের আঁধারে এদিক- সেদিক পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাহারারত ২ জন সশস্ত্র কনস্টেবল ও কয়েজকন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করেন। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা থানা জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পেট্রোল বহনকারী মুক্তিযোদ্ধারা কাট অফ পার্টিতে অবস্থান নেয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধারা থানার চেয়ার-টেবিল ভাংচুর, রেকর্ডপত্র ধ্বংস এবং থানায় রক্ষিত পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে থানার ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত অপারেশন শেষ করে ধৃত কনস্টেবলদ্বয় ও থানার ২টি রাইফেল এবং অন্যান্য অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ভোর হওয়ার আগেই কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে চলে যান।
সুবেদার মেজর টি এম আলীর ক্যাম্প থেকে প্রত্যেক অপারেশনের পর স্থানীয় জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে উৎসাহ সৃষ্টি এবং জনগণের করণীয় সংক্রান্ত দিকনির্দেশনামূলক জনপ্রিয় আঞ্চলিক প্রচারপত্র চরমপত্র রাঙ্গুনিয়ার মুক্তাঞ্চল পদুয়া ছিপছড়ি থেকে প্রকাশিত হতো। সাইক্লোস্টাইল করা এ প্রচারপত্র স্থানীয় হাট-বাজার, পাড়া- গ্রাম ও জনসভাস্থলে বিলি হতো। চরমপত্র প্রকাশ ও প্রচারে মুখ্য ভূমিকা রাখেন চেয়ারম্যান নজির আহমদ চৌধুরী, ইফতেখার হোসেন, আবদুল হাই, নূরুল ইসলাম, হাবিবউল্লাহ ও ডা. আলী আহমদ। এছাড়াও অপারেশনের টার্গেট নির্ধারণ, রেকি করা, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবেদার মেজর টি এম আলীকে সহযোগিতা করেন মুক্তিযোদ্ধা নজির আহমদ চেয়ারম্যান ও ছাত্রনেতা ইফতেখার হোসেন। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড