You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.08 | রাজগঞ্জ যুদ্ধ (মণিরামপুর, যশোর) - সংগ্রামের নোটবুক

রাজগঞ্জ যুদ্ধ (মণিরামপুর, যশোর)

রাজগঞ্জ যুদ্ধ (মণিরামপুর, যশোর) সংঘটিত হয় ৮ই ডিসেম্বর। এতে বহুসংখ্যক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। অনেকে আত্মসমর্পণ করার পর জনতার গণপিটুনিতে প্রাণ হায়ায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মণিরামপুর অঞ্চলে যেসব যুদ্ধ হয়, তার মধ্যে রাজগঞ্জের যুদ্ধ অন্যতম। রাজগঞ্জের উত্তরে যশোর ক্যান্টনমেন্ট, পূর্বে মণিরামপুর থানা, দক্ষিণে সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্ত এবং সর্বপূর্বে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সীমান্ত। পাকসেনাদের যশোর ক্যান্টনমেন্ট অথবা মণিরামপুর থানা থেকে বাগআঁচড়া বা কলারোয়া সীমান্তে যেতে হলে ঘুরে যেতে হতো। এজন্য তারা রাজগঞ্জকে বেছে নিয়ে সীমান্তবর্তী দুটি অঞ্চলে যাতায়াত করত। মুক্তিসেনারা কৌশলগত কারণে সিদ্ধান্ত নেন যেকোনো উপায়ে রাজগঞ্জকে শত্রুমুক্ত রাখতে হবে। রাজগঞ্জ মুক্ত রাখতে পারলে মণিরামপুর, কেশবপুর, ঝিকরগাছা, শার্শা এবং সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার বিশাল এলাকা তারা শত্রুমুক্ত রাখতে পারবেন। এ অবস্থায় মুক্তিবাহিনী রাজগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে। সর্বপ্রকার প্রস্তুতি শেষে ৮ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী রাজগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। হঠাৎ তীব্র আক্রমণের মুখে রাজাকারদের অনেকেই পালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ধাওয়া করেন। এমতাবস্থায় কাশেম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা কাচলির বিলে ৭ রাজকারকে ধরে ফেলেন এবং সেখানেই তাদের হত্যা করা হয়। তবে তখন পর্যন্ত পুরো রাজাকার ক্যাম্প মুক্ত করা যায়নি। রাজগঞ্জ হাইস্কুলের দোতলা ভবন থেকে তখনো রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি বর্ষণ করছিল। বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুপক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলে। মুক্তিবাহিনী এ-যুদ্ধে মর্টার শেল ব্যবহার করে। মর্টার শেলের শব্দে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হলেও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করেনি। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সরাসরি রাজগঞ্জ স্কুল আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আক্রমণের কৌশল হিসেবে দলনায়ক মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক ধাপে অবস্থান নেন এবং মুহুর্মুহু গুলি চালাতে-চালাতে রাজগঞ্জ স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা স্কুলের দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করে ব্রাশ ফায়ার করেন। এতে ৭ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে থাকা অন্য রাজাকারদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। তারা তাতে সাঁড়া দেয়নি। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা স্কুলের কয়েকটি কক্ষে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান। এতে অনেক রাজাকরের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা বাকি রাজাকারদের বন্দি করে স্কুল মাঠে জড়ো করেন। সেখানে ক্রুদ্ধ জনতা তাদের গণপিটুনি দেয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গুলি করে হত্যা করে। রাত ১০টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষ বিজয় উল্লাস করে। রাজগঞ্জ থেকে রাজাকারদের হটানোর পর কেশবপুর-মণিরামপুর থানা হেডকোয়ার্টার্সে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পালিয়ে যায়। [আমিনুর রহমান মামুন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড