You dont have javascript enabled! Please enable it! রাজপাড়া গণকবর (পূর্বধলা, নেত্রকোনা) - সংগ্রামের নোটবুক

রাজপাড়া গণকবর (পূর্বধলা, নেত্রকোনা)

রাজপাড়া গণকবর (পূর্বধলা, নেত্রকোনা) ২০১৩ সালে মাটি খুঁড়তে গিয়ে আবিষ্কৃত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকহানাদাররা এলাকার বয়োবৃদ্ধ জনপ্রিয় ডাক্তার হেম বাগচীকে হিন্দু সম্প্রদায়ের আরো ২ জনসহ হত্যা করলে স্থানীয় লোকজন তাদের এখানে মাটিচাপা দেয়।
নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার রাজপাড়া গ্রামে ২০১৩ সালে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ১৯৭১ সালের ১লা মে সকাল ১০টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্বধলা থানার রাজপাড়ায় যায়। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় পূর্বধলার প্রভাবশালী পাকিস্তানপন্থী দালাল বছির উদ্দিনের ভৃত্য কবির খাঁ। কবির খাঁ পাকিস্তানিদের প্রভাবে পূর্বধলার ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হয়।
পূর্বধলার স্বনামধন্য ডাক্তার হেম বাগচী ও তাঁর আত্মীয় হরিদাস সিংহ বাড়ির আঙ্গিনায় বসে আলাপ করছিলেন। হেম বাগচীর ভৃত্য মেঘু পুকুর থেকে জল তুলে কলসি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। সে-সময় দালালরা পাকসেনাদের দেখিয়ে দেয় যে, এরা হিন্দু। পাকিস্তানি সেনারা পরিচয় জেনে সে স্থানেই তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকিস্তানি দালালরা বাড়িঘরে লুটপাট চালায়।
ডাক্তার হেম বাগচী ছিলেন একজন বৃদ্ধ মানুষ। সারা জীবন তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। কোনো জাতপাতের বিচার করনেনি। তাঁকে কেউ মারতে পারে এটি তিনি বিশ্বাস করতে পারতেন না। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে মানবসেবার কোনো মূল্য ছিল না। তাঁর একমাত্র অন্যায়, তিনি ছিলেন হিন্দু। তাই অত্যন্ত নির্মমভাবে হানাদাররা তাঁকে হত্যা করে। একদিন পর প্রতিবেশী মুসলমানরা হেম বাগচী ও হরিদাস সিংহকে বাড়িতে একটি গর্তে ও মেঘুকে পুকুর ঘাটে অন্য গর্তে মাটিচাপা দেয়। ২০১৩ সালে মাটি খুঁড়তে গিয়ে হেম বাগচী ও হরিদাস সিংহের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। এর সঙ্গে হেম বাগচীর এক পাটি কৃত্তিম মাড়িসহ চোয়াল পাওয়া গেছে, যা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়েছে। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড