You dont have javascript enabled! Please enable it!

রমানাথপুর গণহত্যা (ঝালকাঠি সদর)

রমানাথপুর গণহত্যা (ঝালকাঠি সদর) সংঘটিত হয় ২৩শে মে। এদিন ঝালকাঠি সদর উপজেলার অন্তর্গত রমানাথপুর গ্রামে ১৭ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন। পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা একাত্তরের নয়মাসে বাংলার বুকে চালিয়েছে জঘন্যতম নরহত্যা, নারীধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। অন্যদিকে তারা বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চেয়েছে যে, তারা দেশবিরোধী ও ইসলামবিরোধী ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিহত করছে। তাদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মসজিদে নামাজ আদায়রত মুসল্লিরাও।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই রমানাথপুর শরীফবাড়ির সন্নিকটস্থ ইয়ুথ ক্লাবে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রশিক্ষণ কাজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগঠকরা এখানে আসতেন। তাঁদের একজন তোফাজ্জেল হোসেন সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করতেন।
রমানাথপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দানের খবর বরিশাল জেলা শান্তি কমিটি-র সদস্য মতি তালুকদার (বাউকাঠি) মুসলিম লীগ নেতা ও পাকিস্তান সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিনের মাধ্যমে পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়। শরীফবাড়ির লোকেরা আগে থেকেই মুসলিম লীগ সমর্থক হওয়ায় নিরাপদ ভেবে অনেক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতা পাক হানাদারদের কোপানল থেকে বাঁচার জন্য এ-বাড়ি ও আশপাশের বাড়িগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ খবরও পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। ব্যারিস্টার আখতার উদ্দিন এলাকাটির রোডম্যাপ ও নকশা এঁকে এখানে আসার উপায় পাকবাহিনীকে জানিয়ে দেয়।
পাকবাহিনী ২১শে মে শুক্রবার প্রথমবার রমানাথপুর গ্রাম আক্রমণ করে। এসময় তারা ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের গুলিতে আবদুল মাঝি, আহম্মদ মাঝি, আবদুল হালিম মাঝি, এনাজউদ্দিন মাঝি, তকদী সিকদার, এন্তাজ উদ্দিন, সুমতি ঘরামী, মালতী রাণী মিস্ত্রী, লতিফ মাঝি প্রমুখ নিহত হন। ২৩শে মে পাকবাহিনী দ্বিতীয়বার রমানাথপুর আক্রমণ করলে বহুলোক প্রাণভয়ে আলহাজ্ব মাওলানা শরীফ মোহাম্মদ আবদুল কাদিরের বাড়ির মসজিদে আশ্রয় নেয়। আবদুল কাদির ছিলেন শর্ষিণা মাদ্রাসার শিক্ষক। মসজিদে আশ্রয় নেয়া লোকজন প্রাণ বাঁচাতে উচ্চস্বরে দোয়া-ইউনুস পড়তে থাকেন। ঐ সময় কয়েকজন মুসল্লি সেখানে নামাজ পড়ছিলেন। হনাদাররা মসজিদ থেকে তাদের জোর করে টেনে বের করে রশি দিয়ে বেঁধে মসজিদ সংলগ্ন পুকুরপাড়ে এনে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন: আবদুল মন্নান, আ. হাসেম মাঝি, আ. লতিফ মাঝি, আ. সালাম, আ. রাজ্জাক খান, আ. জব্বার, আলাউদ্দিন এবং জেন্নাত আলী। নিহতরা সবাই স্থানীয় না হওয়ায় অন্যদের নাম জানা যায়নি। শরীফ বাড়ির নূরুল ইসলাম (অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক) এবং আ. রাজ্জাক খান ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। স্বাধীনতা লাভের পর নিহতদের স্মৃতি রক্ষায় মসজিদের পাশে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সেটি আর নেই। রমানাথপুর গণহত্যায় সেদিন যারা পাক হানাদারদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, তাদের মধ্যে আজাহার প্রেসিডেন্ট, কদম আলী শরীফ, আবদুল হাই শরীফ, সফিজ উদ্দিন সরদারসহ আরো অনেকে ছিল। [শ্যামল চন্দ্র সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!