রসুনিয়া গণহত্যা (সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ)
রসুনিয়া গণহত্যা (সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২০শে মে। এতে ৯ জন সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হয়। ২৫শে মার্চ ঢাকায় গণহত্যার পর পাকহানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচার জন্য ঢাকার কিছু হিন্দু ব্যবসায়ী রসুনিয়া গ্রামের নিবারণ দত্ত ওরফে রাম সিং-এর বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ বাড়িতেই সিরাজদিখান থানার প্রথম গণহত্যা সংঘটিত হয়।
১২ই মে থানার শান্তি কমিটি- হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে এলাকায় শান্তি-শৃংখলা রক্ষার ব্যাপারে একটি সভা করে। সভা শেষে সন্ধ্যায় তারা রাজাকার ও পাকবাহিনীর সঙ্গে গোপনে গণহত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামাফিক ২০শে মে মধ্যরাতে পাকসেনারা লঞ্চে বাহেরঘাটা এসে নামে। সেখান থেকে দালালরা তাদের পথ চিনিয়ে রসুনিয়া গ্রামের রাম সিং-এর বাড়িতে নিয়ে যায়। হানাদাররা এ বাড়ির ৯ জনকে বেঁধে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। গুলি কারো বুকে, কারো কণ্ঠে বা মাথায় লাগে। গুলিতে সর্বজনপরিচিত রাম সিং-এর মস্তক উড়ে যায় এবং স্থানীয় হাইস্কুলের শিক্ষক ঊষা কান্তের কণ্ঠনালী ছিদ্র হয়ে যায়। এ নির্মম গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন- ঊষা কান্তি দত্ত (পিতা খগেন্দ্র কুমার দত্ত; শিক্ষক), শান্তি রঞ্জন শীল (পিতা পবিত্র শীল; ক্ষৌরকর্মী), পবন মণ্ডল (পিতা গোপাল মণ্ডল; কৃষক), ভানু মণ্ডল (কৃষক), নিবারণ দত্ত ওরফে রাম সিং (পিতা প্রসন্ন দত্ত; জোতদার), ফালু বাবু (ব্যবসা; ঢাকা থেকে এসে আশ্রয় নেয়া), দেবু বাবু (ব্যবসায়ী; ঢাকা থেকে এসে আশ্রয় নেয়া), প্রদীপ বাবু (পিতা দেবু বাবু) ও জীবন ঘোষ (ব্যবসায়ী; ঢাকা থেকে এসে আশ্রয় নেয়া)। গণহত্যায় নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। স্থানটি বর্তমানে প্রায় নিশ্চিহ্ন। এ গণহত্যার পর পাকসেনা ও রাজাকাররা সিরাজদিখান বাজার ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক লুটপাট ও ভাংচুর চালায়। [মো. শাহজাহান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড