You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক রফিকুল ইসলাম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক রফিকুল ইসলাম

রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার হুগলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নুর মিয়া এবং মাতার নাম গুল বানু। তিনি হুগলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি এবং সিলেটের এ জেট স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
রফিকুল ইসলাম ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সিপাহি পদে যোগদান করেন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সৈনিক হিসেবে তিনি চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে সারাদেশে যখন তীব্র অসহযোগ আন্দোলন চলছিল, তখন তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এ উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথম দিকে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
সেক্টর কেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রফিকুল ইসলাম রাজনগর সাব-সেক্টরের বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। এ সাব- সেক্টরের এলাকা ফেনীর বিলোনিয়া, লাকসামের দক্ষিণাঞ্চল এবং নোয়ালখালী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন জাফর ইকবাল, ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম এবং লে. ইমাম-উজ-জামান। ফেনীর বিলোনিয়ায় পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এ ঘাঁটির ওপর একাধিকবার আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা যখন পতন ঘটাতে পারছিলেন না, তখন নভেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে অপারেশন পরিচালনা করেন। ২রা নভেম্বর রাতে এ আক্রমণ পরিচালিত হয়। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। পাকহানাদাররা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়৷ যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকবাহিনী বিমান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গোলা বর্ষণ করে। তবে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন। এ- যুদ্ধে রফিকুল ইসলাম বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। এক সময় পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর শেলের আঘাতে রফিকুল ইসলাম আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার রফিকুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ৪০২, খেতাবের সনদ নম্বর ১৫২)।
সাহসী সৈনিক রফিকুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে আহত হওয়ায় তাঁর আর সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে তিনি স্মৃতিশক্তি ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি ব্যক্তি জীবনে ৪ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আছমা খানম। তিনি বর্তমানে সিলেট শহরের ঘাষিটোলায় বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড