রঘুনাথপুর গণহত্যা (চাঁদপুর সদর)
রঘুনাথপুর গণহত্যা (চাঁদপুর সদর) সংঘটিত হয় ৮ই সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হন।
দিনটি ছিল রঘুনাথপুর বাজারের সাপ্তাহিক হাটবার। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল মুক্তাঞ্চলের এ বাজারে। ভরা বর্ষায় চতুর্দিক থেকে নৌকাযোগে আসা ক্রেতা-বিক্রেতায় বাজারটি ছিল পরিপূর্ণ। বিকেল ৩টার দিকে ৫০-৬০ জন রাজাকার ছইওয়ালা ৬-৭টি নৌকায় করে বাজারের পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক দিয়ে বাজারে প্রবেশ করে। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আ. মতিন এ-সময় বাজারের দিঘির পূর্ব-উত্তর কোণের বগীরমার বাড়ি বলে পরিচিত দিঘির পাড়ে একটি নৌকায় এবং অন্য একটি নৌকায় সহযোদ্ধারা অবস্থান করছিলেন। আ. মতিন রাজাকারদের আগমন টের পেয়ে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে এলএমজি তাক করেন। সহযোদ্ধারা বাজারের হাজার- হাজার মানুষের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় তাঁকে গুলি ছুড়তে বারণ করেন। অপরদিকে দালাল মন্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ শুরু করে। তারা প্রথমেই মুক্তিযোদ্ধা আ. মতিনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা ফাঁকা গুলি চালিয়ে সমগ্র এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বাজারের অপ্রস্তুত লোকজন গুলির আওয়াজে চতুর্দিকে পালাতে শুরু করে। বাজারের মধ্যবর্তী বোয়ালজুরি খালের ওপরের কাঠের পুলে রাজাকাররা অনেক মানুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড শেষে অর্ধশতাধিক লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর অনেকের লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজনরা নিয়ে যায়। দূর- দূরান্তের অনেক মানুষ শহীদ হওয়ায় সকল শহীদদের পরচিয় জানা যায়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন (রাজাপুর, শাহরাস্তি), সামছুল হক (তারা পাল্লা, হাজিগঞ্জ), জুনাব আলী (তারাপাল্লা, হাজিগঞ্জ), মোয়াজ্জেম হোসেন (মহব্বতপুর, হাজিগঞ্জ), নজরুল ইসলাম (মদ্দিরবাগ, কচুয়া), প্রাণভল্লব শীল (রামপুর, হাজিগঞ্জ), আবদুল আউয়াল চৌধুরী (ধড্ডা, হাজিগঞ্জ), গিরিশ চন্দ্র সরকার (পরাণপুর, কচুয়া), মোখলেসুর রহমান (ওড়পুর, হাজিগঞ্জ), আবদুর রব (ওড়পুর, হাজিগঞ্জ), জংশর আলী (ওড়পুর, হাজিগঞ্জ), আবদুর রশীদ খন্দকার (সাড়াশিয়া, হাজিগঞ্জ; ৭ম শ্রেণির ছাত্র) ও জাহানারা বেগম (৮) (দেবীপুর, কচুয়া)। [মনিরুজ্জামান শাহীন ও মোহেববুল্লাহ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড