রণজিৎ দত্ত ভবন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (কালিয়া, নড়াইল)
রণজিৎ দত্ত ভবন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (কালিয়া, নড়াইল) পরিচালিত হয় ৯ই জুলাই। বাগেরহাটের মাওলানা ইউসুফ আলীর মদদে স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কালিয়া উপজেলায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বড়নাল গ্রামের গাজি আবদুল লফিত, সীতারামপুরের আ. হামিদ শেখ, চাঁদপুরের শেখ খলিলুর রহমান, আবদুল ওয়াদুদ, আবদুল বারিক সরদার প্রমুখ। রাজাকার বাহিনীর কার্যালয় ছিল কালিয়া বাজারস্থ রণজিৎ দত্তের পরিত্যক্ত ভবনে। ভবনের পেছনে স্রোতস্বিনী নবগঙ্গা নদী। ক্যাম্প থেকে মাত্র পাঁচশ গজ দূরে কালিয়া থানা।
ঘটনার দিন ক্যাম্পে ৩০ জন সশস্ত্র রাজাকার ছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল সাবেক আনসার সদস্য। থানা অতি নিকটে হওয়ায় রাজাকাররা নিজেদের খুব শক্তিশালী মনে করত। এখান থেকে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করত এবং হত্যাকাণ্ড চালাত। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্পে অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা করেন।
৯ই জুলাই রাতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সরদার আবদুস সাত্তার, এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, মোল্যা মনিরুজ্জামান, হিমায়েত মুন্সি, মোশাররফ হোসেন টুকু এবং শরিফ নুরুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে কালিয়া সদরের নিকটবর্তী বেন্দা গ্রামে জননেতা এখলাসউদ্দিন আহমদের বাড়িতে সমবেত হন। এখান থেকেই গভীর রাতে তাঁরা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। অপারেশনের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন কমান্ডার মোল্যা মনিরুজ্জামান। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পে গুলি চালাতে থাকলে রাজাকাররাও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষে শুরু হয় বন্দুক যুদ্ধ। এক পর্যায়ে রাজাকাররা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কয়েকজন ভবনের পেছনে নবগঙ্গা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কয়েকজন রাজাকার অন্য দিক দিয়ে পালিয়ে যায় এবং ১১ জন ধরা পড়ে৷ মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নদীর তীরে নিয়ে হত্যা করেন। নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়া রাজাকারদের মধ্যে তিনজন পরদিন সকালে গ্রামবাসীদের হাতে নিহত হয়। এ অপারেশন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ১৯টি রাইফেল, কয়েকটি পিস্তল ও অনেকগুলো গুলি হস্তগত করেন। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড