You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.13 | রণজিৎপুর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

রণজিৎপুর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর)

রণজিৎপুর গণহত্যা (বাগেরহাট সদর) সংঘটিত হয় ১৩ই মে। এতে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
বাগেরহাট শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রণজিৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা নির্মম গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। ২৪শে এপ্রিল বাগেরহাটে পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশের পর এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে থাকেন। রণজিৎপুর গ্রামের হাইস্কুল ভবনকে কেন্দ্র করে হৃষীকেশ দাসের নেতৃত্বে এপ্রিলের শেষদিকে ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল গঠিত হয়। ফকিরহাট থানার দেয়াপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত ইপিআর সদস্য এস এম মহব্বত আলী এবং তাঁর সঙ্গে মতিয়ার রহমান, লিয়াকত আলী, আবদুল খালেক, দুলাল প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা এখানে এসে রণজিৎপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব কর্মকাণ্ডের খবর পেয়ে ১৩ই মে সকালে রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা রণজিৎপুর গ্রামে আক্রমণ করে। আক্রান্ত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। ঋষীকেশ দাসের নেতৃত্বে একটি দল পূর্বদিক দিয়ে আসা রাজাকারদের প্রতিহত করার দায়িত্বে ছিল। এক পর্যায়ে তাঁরা রাজাকারদের সায়েরা-মধুপুর স্কুল পর্যন্ত হটিয়ে দিতে সক্ষম হন। রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা যখন খেয়ায় উঠে নদী পার হচ্ছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ১৯ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য দুটি ভাগ পশ্চিম দিক দিয়ে আসা রাজাকার ও পাকবাহিনীকে প্রতিহত করে। কিন্তু এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাজাকাররা রণজিৎপুর গ্রামে ঢুকে পড়ে। পশ্চিম দিক থেকে আসা পাকসেনা ও রাজাকারদের যৌথ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন স্থানে এম্বুশে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা একে-একে শহীদ হন। এখানে মোট ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সনাতন দাস, নির্মল দাস, কনক দাস, কানাইলাল দাস, দুলাল কৃষ্ণ দাস, কালীপদ দাস, নিশিকান্ত দাস, চিত্তরঞ্জন দাস, নকুলকৃষ্ণ দাস, অমূল্য কুমার দাস, মণীন্দ্রনাথ দাস, গোবিন্দ দাস, শ্রীপদ দাস এবং নিতাই কৃষ্ণ দাস। এরপর হৃষীকেশ দাস, এস এম মহব্বত আলী ও লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে বাকি মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণহানির পর হানাদার বাহিনী তাদের সর্বশক্তি নিয়ে রণজিৎপুর গ্রামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রামে ঢুকে তারা নির্বিচার গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষদের হত্যা করতে থাকে। এদিন এ গ্রামে তাদের নৃশংসতার শিকার হন গণেশচন্দ্র দাস, রাধাকান্ত দাস, নির্মল কৃষ্ণ দাস, বিরাজমোহন দাস, পরিতোষ চক্রবর্তী, নিশিকান্ত চক্রবর্তী, বিনোদ চক্রবর্তী, রাজেন্দ্রনাথ দাস, ইন্দুভূষণ দাস, শ্রীবাস দাস প্রমুখ। এঁদের মধ্যে শেষের দুজন ছাড়া বাকি সকলে ছিলেন রণজিৎপুর গ্রামের অধিবাসী। এ গণহত্যার পর তারা গ্রামে লুণ্ঠন ও নারীনির্যাতন শুরু করে। নারীদের শরীর থেকে অলঙ্কারাদি খুলে নেয়। কয়েকজন মহিলার চুল কেটে দেয়। অনেকের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। হানাদাররা সবশেষে গ্রামের সব বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। [স্বরোচিষ সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড