রতনদিয়া গণহত্যা (বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী)
রতনদিয়া গণহত্যা (বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে। পাকবাহিনীর দোসর স্থানীয় বিহারি ও দালালরা রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত রতনদিয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এতে ১০ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
নিমতলা-মথুরাপুর সড়ক থেকে জামালপুরগামী রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে বিলপুটিয়ার ধারে রতনদিয়া গ্রামের অবস্থান। রাজবাড়ী সদর, মধুখালি এবং বালিয়াকান্দি এ তিনটি উপজেলার সংযোগস্থলে এ গ্রামটি। ঘটনার দিন সকাল আটটার দিকে স্থানীয় বিহারি ও দালালদের ৭-৮ জনের একটি সশস্ত্র দল গ্রামটিতে হামলা চালিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের অনেককে ধরে এনে এক জায়গায় আটক করে রাখে। তারপর তারা নির্বিচারে মানুষের বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। আটককৃতদের কয়েকজনকে দিয়ে তারা লুটের মালামাল বহন করায়। এক পর্যায়ে কয়েকজন বিহারি একটি বাড়িতে ঢুকে বাড়ির কয়েকজনকে ধরে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। দুটি মেয়েকে আটক করে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর ৮-১০ জন লোকের কোমরে দড়ি বেঁধে প্রথমে একটি ঘরে নিয়ে যায় এবং পরে তাদের হাত- পা বেঁধে প্রখর রোদের মধ্যে ফেলে রাখে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর আটককৃতরা পানিপিপাসায় ছটফট করেত থাকে। আব্দুল মজিদ মিয়া নামে গ্রামের এক ব্যক্তি সশস্ত্র বিহারিদের অনুমতি নিয়ে এক বালতি পানি এনে তাদের পান করান। তাদের প্রাণভিক্ষার জন্য তিনি এগিয়ে গেলে বিহারিরা তাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। এরপর লোকগুলোকে তারা দড়িতে বেঁধে জঙ্গলের দিকে নিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন এ গণহত্যায় শহীদ হন— কালীপদ, মাখন বাওয়ালী, মদন বাওয়ালী, কেষ্ট বাওয়ালী, কুশাই বিহারীলাল, কুমুদ বৈরাগী, বিনোদ কুমার বৈরাগী, যতীন মণ্ডল এবং অমল পাল। [এম ইকরামুল হক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড